মহাসড়কগুলোতে যানজট নিরসন হচ্ছে না যে কারণে
নিজস্ব প্রতিবেদক: মহাসড়কে যানজটের কারণগুলো নিরসনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর ‘মৌখিক’ পরামর্শ এবারও কোনও কাজে লাগেনি। টোলপ্লাজাসহ ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত, প্রয়োজনীয় স্থানে বিকল্প অস্থায়ী ব্রীজ নির্মাণও করা হয়নি। টোলপ্লাজাগুলোতে অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা সার্বিকভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। এতে যানবাহনের গতি কমেছে মহাসড়কগুলোতে। অন্যান্যবারের মতো যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবারও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিধিনিষেধ শিথিল ও ঈদের ছুটির কারণে যানবাহনের চাপও বেড়ে যায় সড়ক-মহাসড়কে। অন্যান্য সময়ে তুলনায় এ সময়ে যানবাহনের চাপে যানজটের সৃষ্টি হয় বলে তা এড়াতে পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার বেশিরভাগই এবারের ঈদে বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানা গেছে।
মহসড়কগুলোর বেশিরভাগ চার লেনের। আবার এসবেরই মাঝে কোথাও কোথাও আছে দুই লেনের মহাসড়ক। চার লেনের গতি থেকে যখন দুই লেনের সড়কে যানবাহনগুলো চলাচল করে তখন এগুলোর গতি কমে যায়। এতে ওইসব স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কগুলোতে যানজটের অন্যতম আরেকটি কারণ হচ্ছে টোলপ্লাজাগুলো। টোল দিতে গিয়ে টোলপ্লাজাগুলোর দু’দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সেজন্য র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রতি প্রস্তাবনা ছিল যানবাহনের টোল যেন অনলাইনে আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সেটাও এবার বাস্তবায়ন হয়নি।
টোলপ্লাজার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির মেঘনা ও গোমতী সেতু এবং মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজার জন্য যানবাহনের গতি কমে যায়। একইভাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয় এ মহাসড়কে। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় মহাসড়কগুলোতে যানজটের কারণ হিসেবে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ কিছু পরামর্শ দিয়ে বলেন, দেশের অনেক রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। টঙ্গী-গাজীপুর প্রধান সড়কে বড় বড় গর্ত রয়েছে। গর্তগুলোকে শুধু ইট দিয়ে অস্থায়ীভাবে মেরামত না করে টেকসই মেরামত করা প্রয়োজন। চন্দ্রা-টাঙ্গাইল চার লেনের মহাসড়ক পরবর্তীতে দুই লেন হওয়ায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পার্শ্বে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। তাছাড়া নলকা ব্রিজের কারণে প্রায়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ওই ব্রিজের জায়গায় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মাধ্যমে একটি অস্থায়ী বেইলি ব্রিজ তৈরি করার বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে পরামর্শ দেন। কিন্তু সেটি নির্মাণেরও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু ও দাউদকান্দি ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় ঈদের ছুটিতে হাজার হাজার গাড়ী যাতায়াতের কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এর বড় কারণ হচ্ছে সব ধরণের যানবাহনকে একই সময় টোল প্লাজায় লাইন ধরে টোল রিসিট সংগ্রহ করতে হয়। এতে অনেক সময় লাগে। তাই যানবাহন মালিকদের আগে থেকে অনলাইন বা ব্যাংকের মাধ্যমে টোল পরিশোধের উদ্যোগ নিতে র্যাবের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাছাড়া মোটর সাইকেলের জন্য টোল প্লাজায় আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা হলে ব্রিজ এলাকায় যানজট কিছুটা হলেও কমে যেতে পারে। তবে এ বছর পুরোপুরি এসব উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব না হলেও আগামিতে এই ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পরামর্শ অনুযায়ী মহাসড়কগুলোতে ব্রিজের টোল যানবাহন মালিকরা অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা কেনো নেননা জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, তার মালিকানাধীন এনা পরিবহনের সবগুলো যানবাহনেরই অনলাইনে টোল দেওয়ার ব্যবস্থা তিনি করেছেন। আর কোনও মালিকপক্ষ দেন কিনা সেটা তার জানা নেই। তিনি বলেন, টোল তো দিতেই হয়। অনলাইনে দেওয়ার ব্যাবস্থা থাকলে সবার জন্যই মঙ্গল। সময়ও বাঁচবে, যানজটও কমবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন