ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি: দাম পাচ্ছেন না দেশীয় পেঁয়াজ চাষীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: ধ্বস নেমেছে পেঁয়াজ-রসুনের বাজারে। এখন চলছে মসলা জাতীয় এই ফসল উত্তোলন ও কেনা-বেচার ভরা মৌসুম। তবে চাষী সহ ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কপালে ভাজ পড়েছে পেঁয়াজ-রসুনের দাম নিয়ে। বাজারে উঠেছে মৌসুমী ফল তরমুজ, তবে এক একটা বড় সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫’শ টাকা দরে। অন্যদিকে বাজারে ১মণ পেঁয়াজ-রসুনও বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫’শ টাকা মণ দরে।
দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে খ্যাত ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে পেঁয়াজ ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা মণ দরেও বিক্রি হচ্ছে তবে রসুন বিক্রি হচ্ছে আরোও কম দামে। ২’শ থেকে ৩’শ টাকা মণ আবার সর্বোচ্চ ৫’শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো কোনো হাটে রসুনের কোন দামই পাচ্ছে না চাষী এবং ব্যবসায়ীরা।
এদিকে রাজবাড়ী রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম সহীদ নূর আকবর জানান, লোকসানে পড়ে ভারত থেকে আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কোনো কোনো চাষি। আবার কেউ বা আগামীতে আর পিঁয়াজ আবাদ ‘করবেন না’ বলে জানান।
বাজার দর ছয়শ থেকে আটশ টাকা না হয়ে এক হাজারের ওপরে থাকলে কৃষকরা লোকসানের হাত থেকে মুক্তি পেত বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মনে করছে।
পেঁয়াজ রোপনে খরচের তুলনায় বাজারে আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের কৃষক ছালাম মোল্লা। উৎপাদন খরচ বেশি, আবার বিক্রয়মূল্য কম পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছালাম।
ভারতের পেঁয়াজই এদেশের কৃষকদের মেরে ফেলবে, মন্তব্য করে আরেক কৃষক রমাদ্বান শরীফ আলী বলেন, এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার দরকার কী? আরও তিন মাস পরে আনত; তাহলে কৃষক কয়টা পয়সা পেত।
তিনি বলেন, নিজের জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা চাষিরা উৎপাদন খরচ ওঠাতে পারলেও জমি ইজারা নিয়ে চাষ করা কৃষকেরা রয়েছেন লোকসানে। এভাবে পেঁয়াজের দাম পেলে আগামী বছর আর আবাদ করব না।
ঝিনাইদহের শৈলকুপাতে সাপ্তাহিক শনি ও মঙ্গলবার দুটি হাট বসে পেঁয়াজের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ও ব্যাপারীরা একদিন আগেই চলে আসে শৈলকুপাতে, তারা ট্রাকে ভর্তি করে পেঁয়াজ নেয় দেশের অন্যান্য বড় বড় হাট-বাজারে।
মনোহরপুর গ্রামের কৃষক লিটু, তাহের সহ কয়েকজন জানান প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে ফলন কম হওয়ায় এবার একবিঘায় (৪০ শতাংশ) ৫০ থেকে ৬০ মণ করে পেঁয়াজ পাচ্ছেন। যা বর্তমান বাজার প্রতি মণ ৫শ থেকে ৭শত টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে সার-ওষধ আর কৃষি শ্রমিকের বিল পরিশোধ করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
শৈলকুপার চর সোন্দহ গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, তিনিও তার জমিতে এবার পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে ৫শ মণের বেশী পেঁয়াজ পাবেন বলে আশা করছেন। আমিরুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে এ উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষকরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন না। তাই সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।
পেঁয়াজের এমন দুরাবস্থার পাশাপাশি আরেক মসলা জাতীয় ফসল রসুন নিয়েও বিপাকে পড়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে এখন চায়না থেকে আমদানী করা চায়না রসুনের ছড়াছড়ি। এই রসুন মনপ্রতি ১৫ থেকে ১৬শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশীয় পুরাতন রসুন যেন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কোন বাজারে পুরাতন রসুন ২’শ থেকে ৩’শ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন