বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা: আইটিইউসির রিপোর্ট
নিউজ ডেস্ক: বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার রয়েছেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা। অবহেলিত ও বঞ্ছিত শ্রমিকদের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে। বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়নের (আইটিইউসি) বার্ষিক রিপোর্টে এই তথ্য দেয়া হয়েছে। রিপোর্টে ২০২১ সালের গ্লোবাল রাইট ইনডেক্সের তালিকায় যেসব দেশের শ্রমিকরা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে এমন ১০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ১৪৯টি দেশের শ্রমিক অধিকার ও অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের উপর আরোকপাত করে এই রিপোর্টি করা হয়েছে।
বার্ষিক রিপোর্টে যে দেশগুলো খারাপের তালিকায় স্থান পেয়েছে সেগুলো হলো, বাংলাদেশ, বেলারুশ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, মিশর, হন্ডুরাস, মায়ানমার, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও জিম্বাবুয়ে।
রিপোর্টে বলা হয় এই দেশগুলোকে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নেই অনেক ক্ষেত্রে তা সীমিত। কারখানা পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মতামত নেয়া হয় না। আবার কখনো নিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়না। কারখানার মালিকরা নানাভাবে প্রতারিত করেন। কর্মঘন্টার সঠিক মূল্য তারা পায় না। লেবার ইউনিয়নগুরোও অনেকক্ষেত্রে শ্রমিকদের বিপক্ষে কাজ করে। শ্রমিকদের কারখানার তথ্য সরবরাহ করা হয়না। শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ক খুবই নিম্নস্থরের। শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ অন্যান্য আরো ছুটির বিষয়েও অবহেলা করা হয়। শ্রমিকদের বেতন বকেয়া বা খুবই কম দেয়া হয়। কর্মঘন্টার বেশি সময় খাটানো হয়। শ্রমিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও আন্দোলন করার স্বাধীনতা নেই। তাদের অনেক সময় পুলিশি নির্যাতন ও মামলায় হয়রানি হতে হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক শিল্প ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, রিপোর্টে যা বলা হয়ে তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। দেশের পোশাক করাখানাগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়েছে। গ্রীণ কারখানার সার্টিপিকেট পাচ্ছে অনেক কারখানা। কিন্তু শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাদের বার্গেনিং ক্ষমতা নেই। কোন কারখানার শ্রমিক তার মালিকদের সঙ্গে কথা বরতে পারেন না। দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে কিছুটা হলেও ট্রেড ইউনিয়ন আছে কিন্তু অন্য ধরনের কারখানা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন নাই। শ্রমিকদের উপর পুলিশি হামলা ও নির্যাতন হয়।শুধুমাত্র গার্মেন্ট শ্রমিকদের উপর এখনো মামলা রয়েছে কয়েকশত। মালিকরা কখনো কখনো সরকারও কারখানা ভাংচুর সড়ক অবরোধ নাশকতার নামে এসব মামলা দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, এক সময়ে দেশে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর জোরালো আন্দোলন ছিল। শ্রমিক নেতারা বার্গেনিং করতেন শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে। এখন গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নের কিছু অস্থিত্ব থাকলেও বেশির ভাগ শিল্পে ই্উনিয়ন নেই। দেশে নিবন্ধিত ৭০০ ট্রেডইউনিয়ন রয়েছে। এরমধ্যে অস্থিত্ব রয়েছে মাত্র ৩০০শর। বাকি ট্রেডইউনিয়ন হারিয়ে গেছে। একটি শিল্প বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য শ্রমিকদের অবশ্যই মতামত থাকতে হবে। আইএলওর যে নিয়মকানুন আছে তা মেনেই বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শিল্প কারখানাগুলোকে চালাতে হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন