বিইএ’র পরামর্শ: গরিবের ওপর কর না বাড়িয়ে ধনীদের চাপ দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপের মাধ্যমে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ওপর চাপ বাড়ানোর সংস্কৃতি বন্ধ করে কর আদায়ে বিত্তবান-ধনীদের ওপর যুক্তিসঙ্গত চাপ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি (বিইএ)।
বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম এমন বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক। আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ ও (ভ্যাটনীতি) জাকিয়া সুলতানা।
অর্থনীতি সমিতি বলছে, এ পরিস্থিতিতে জাতীয় বাজেটের জন্য সম্পদ আহরণ করতে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ধনী, বিত্তবান, সম্পদশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যারা সম্পদ-আয় ও মুনাফার অর্থমূল্য কম প্রদর্শনের মাধ্যমে সঠিক কর দেয় না, তারা যেন সঠিক পরিমাণ কর দেয়, তা শক্তভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবনায় অর্থনীতি সমিতি বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারকে চার মাত্রিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ওপর জোর দিতে বলেছে। কারণ অর্থনৈতিক মন্দা ও কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বের সব দেশই এখন অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাগত, স্বাস্থ্যগত ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।
সমিতি মনে করে, লকডাউনের প্রভাবে নিরঙ্কুশ দরিদ্র, হতদরিদ্র, চরম দরিদ্র, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্য-মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যাপকাংশ দরিদ্রতর হয়েছে। কর্মবাজার ভীষণভাবে সংকুচিত ও বিপর্যস্ত। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের ওপর নতুন খড়গ হয়ে নেমে এসেছে দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি। এসব মিলিয়ে বৈষম্য নিরূপণের মাপকাঠি গিনি সহগ ও পালমা অনুপাত অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন উচ্চ ও বিপজ্জনক আয় বৈষম্যের দেশে পরিণত হয়েছে।
লকডাউন ও বিধি-নিষেধে নিঃস্ব, সর্বস্বহারা, হতাশাগ্রস্ত, ও ভাগ্যনির্ভর মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাসের যত পথ ও পদ্ধতি আছে তা প্রয়োগ করে সবার আগে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে বলে মনে করে অর্থনীতি সমিতি। তাদের মতে, আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে কোনোভাইে সংকোচনমূলক না করে বরং সম্প্রসারণশীল ও বৃহদাকার রূপে প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আয়, ধন ও সম্পদের বণ্টনকে ন্যায্য করা। অর্থাৎ ধনীদের কাছ থেকে তা প্রবাহিত করতে হবে দরিদ্র, বিত্তহীন ও নিম্নবিত্ত মানুষের দিকে।
রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে দরিদ্রদের ওপর প্রত্যক্ষ করের বোঝা না বাড়িয়ে ধনী-বিত্তশালীদের ওপর সম্পদ-কর আরোপ করতে হবে, সুপার-ডুপার ধনীদের ওপর করের হার বাড়াতে হবে এবং ৮০ শতাংশ শেয়ার-বন্ডের মালিক গুটিকয়েক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বড় বড় বিনিয়োগের ওপর সম্পদ-কর আরোপ করতে হবে।
সমিতির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর আরোপ এবং কালো টাকা ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করতে নিতে হবে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। দেশপ্রেম ও সদিচ্ছা থাকলে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা কঠিন কিছু নয়। পরোক্ষ করের বোঝা মূলত দরিদ্র, প্রান্তিক, নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্য-মধ্যবিত্তদের ওপর তাদের আয়ের তুলনায় অধিক হারে চাপ প্রয়োগ করে; ফলে তা দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস না করে উল্টো আরও বাড়িয়ে দেয়। সে কারণে পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করের অনুপাত বেশি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন