দিনে শ্রমিক রাতে ছিনতাইকারী, খুনেও নেই দ্বিধা
নিজস্ব প্রতিবেদক: কেউ নির্মাণ শ্রমিক কেউবা অটোরিরিকশা চালক, কেউ আবার দিনমজুর। দিনের কর্মযজ্ঞ শেষে রাতে মিলিত হয় তারা। এরপর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর চৌরাস্তা-টাঙ্গাইল অংশে ফাঁকা ও নির্জন স্থানে অটোরিকশা নিয়ে নেমে পড়ে ওরা। সুযোগ বুঝে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও সিএনজির মতো বিভিন্ন যানবাহন আটকে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে পালিয়ে যায়।
বাধা দিলেই বিপত্তি। কোনো যাত্রী বাধা দিলে, মোবাইল কিংবা মানিব্যাগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ছুরিকাঘাতে সব নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্র্ধষ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা।
গত ১২ নভেম্বর রাতে ছিনতাই চক্রটির খপ্পরে পড়েছিলেন গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সম্মান শেষবর্ষের ছাত্র ছিল মেহেদী হাসান তুহিন (২৩)। মোবাইল চাওয়ায় সে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অটোরিকশা থেকে নেমে দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টাও করে। কিন্তু পেছন থেকে চাপাতির কোপে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এলআইসি শাখার একটি দল গাজীপুরের ক্লু-লেস ওই মেহেদী হত্যাকা-ের রহস্য উম্মোচনসহ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অটোরিকশাসহ নগদ অর্থ ও পাঁচটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
রোববার রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় এলআইসি শাখার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
নিহত মেহেদীর বাড়ি গাজীপুরের বাসন থানার মজলিশপুর কাজীপাড়ায়। তার বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। মেহেদী লেখাপড়ার পাশাপাশি গত ৬ মাস ধরে জিএমপির কোনাবাড়ীর রুনু সুপার মার্কেটের একটি অপ্পো মোবাইল কোম্পানির দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিল।
গত ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা গলাকেটে হত্যা করে মেহেদী হাসান তুহিনকে।
ওই ঘটনায় বাসন থানার মামলা হলে সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে ক্লু-লেস মামলার রহস্য উন্মোচন করে। অভিযান পরিচালনা করে মেহেদী হত্যায় জড়িত সুমন হোসেন (২৪) ও হযরত আলীকে (২২) কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পেশায় দুজনই ইট-বালুর শ্রমিক। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যে বাসের হেলপার মাসুদ রানা (২২) ইট-বালুর শ্রমিক অলিয়ার রহমান (রাজু) ও অটোচালক ফখরুল ইসলামকে ছিনতাইকালে ব্যবহৃত অটোরিকশাসহ ডেমরা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, তারা মূলত ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য। গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আশপাশের এলাকায় নির্দিষ্ট অটোবাইক নিয়ে গভীর রাত হতে ভোর পর্যন্ত রাস্তায় যাত্রী ও পথচারীদের টার্গেট করে ছিনতাই করে। কেউ ছিনতাইকালে বাধা প্রদান করলে তারা তাদের সঙ্গে থাকা ধারালো চাপাতি, লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
মেহেদী হত্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, মেহেদী কোনাবাড়ীর রুনু মার্কেটের ‘লোটাস টেলিকম’ থেকে কাজ শেষে মজলিশপুরের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। নাওজোড় এলাকার আব্দুল মালেক সরকার নিউ সুপার মার্কেটের সামনে পৌঁছলে তার কাছে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। মেহেদী প্রতিরোধ করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মেহেদী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পেছন থেকে ধারালো চাপাতি দিয়ে গলাকেটে দ্রুত পালিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।
দিনের কর্মযজ্ঞ দেখে কারো বোঝার উপায় নেই ওরাই রাতের ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য ১০/১২ জন। তারা গত দুই বছর ধরে ছিনতাই কর্মে জড়িত। গ্রেফতারদের মধ্যে মাসুদ রানা একাধিক মামলার আসামি।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন