দপ্তরে দপ্তরে দুদকের সাড়ে ১০ হাজার চিঠি, প্রতিকার কি?
নিজস্ব প্রতিবেদক: দুদকের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ১০ হাজার ৭৬৬টি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। বিপরীতে এসব অভিযোগের বিষয়ে আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না- জানা নেই দুদক কর্তৃপক্ষের।
দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুদকের পাঠানো চিঠি সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না- এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা মেলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পাঠানো চিঠির পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে। গত তিন বছরে ১৮৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তিতে মাউশিকে চিঠি পাঠায় দুদক। কিন্তু সে বিষয়ে বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২৯ ডিসেম্বর মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুককে তলব করে দুদক। তলবের পর পেন্ডিং অভিযোগের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় সংস্থাটি। একই সঙ্গে দুদকের পাঠানো অভিযোগগুলোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে একজন ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুদকের পরিসংখ্যান যা বলছে:
দুদক থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে দুদক মোট ১৭ হাজার ৯৮৩টি অভিযোগ পায়। এর মধ্যে ৯৩৭টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৩৭৭টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে পাঠিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে চিঠি দেওয়া হয়।
একইভাবে ২০১৮ সালে ১৬ হাজার ৬০৬টি অভিযোগের মধ্যে এক হাজার ২৬৫টি অনুসন্ধান এবং এক হাজার ৪০৪টি অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৩৭১টি অভিযোগ থেকে এক হাজার ৭১০টি অনুসন্ধান এবং তিন হাজার ৬২৭ অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়।
২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ থেকে ৮২২টি অনুসন্ধান এবং দুই হাজার ৪৬৯টি অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয় দুদক। সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৪৯টি অভিযোগ থেকে মাত্র ৫৩৩টির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। বাকি দুই হাজার ৮৮৯টি অভিযোগ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয় দুদক ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ থেকে ৮২২টি অনুসন্ধান এবং দুই হাজার ৪৬৯টি অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয় দুদক। সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৪৯টি অভিযোগ থেকে মাত্র ৫৩৩টির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। বাকি দুই হাজার ৮৮৯টি অভিযোগ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয় দুদক।
কমেছে অনুসন্ধানের হার:
দুদক সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বছর অর্থাৎ ২০২০ ও ২০২১ সালে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রমও কমে অর্ধেকে নামে। সংক্রমণ শুরুর আগের দুই বছর অর্থাৎ ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মোট দুই হাজার ৯৭৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য সিদ্ধান্ত নিলেও পরের দুই বছর এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৩৫৫টিতে।
যদিও আগের দুই বছরের তুলনায় পরের দুই বছর দুদকে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ কিছুটা কম জমা পড়ে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মোট ৩৭ হাজার ৯৭৭টি অভিযোগ জমা পড়ে, এর মধ্যে প্রায় আট শতাংশ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে দুদক।
পরের দুই বছর অর্থাৎ ২০২০ ও ২০২১ সালে অভিযোগ জমা পড়ে ৩৩ হাজার ৩৩৮টি। এর মধ্যে ৪ শতাংশ অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
অনুসন্ধান কমে যাওয়া প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘অতীতে যে ধরনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে কোনো ফল পাওয়া যায়নি, ওই ধরনের অভিযোগ কমিশন এখন আর আমলে নিচ্ছে না। ফলে অনুসন্ধানের সংখ্যা কমেছে। এছাড়া গত দুই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিভিন্ন সময় নানা বিধিনিষেধ ছিল। এ কারণেও অভিযোগ ও অনুসন্ধানের সংখ্যা কম।’
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৪১৫টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে এক হাজার ২৪০টির অনুসন্ধান করা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে ১২ হাজার ৯৯০টি অভিযোগ পেয়ে এক হাজার সাতটির অনুসন্ধান করে দুদক।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন