টঙ্গী পার হতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা
গাজীপুর সংবাদাদাতা: টঙ্গী সেতু বন্ধ করে দেওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে চলাচলকারী উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার যাত্রীরা। দীর্ঘ যানজটে বসে দুর্ভোগ পোহাতে না পেরে অনেকে হেঁটে চলাচল করছেন। যানবাহনগুলোকে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) গভীর রাতে টঙ্গী বাজারের পাশে তুরাগ নদীর ওপর নির্মিত ঢাকায় প্রবেশের পুরোনো সেতুর পাটাতন ভেঙে পড়ে। পরে লোহার পাটাতন দিয়ে সাময়িকভাবে যান চলাচল সচল রাখা হলেও বিআরটি কর্তৃপক্ষ সেতুটি পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় গত বুধবার (১০ নভেম্বর) রাত ১২টা থেকে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে শুরু হয় যানজট। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা-টঙ্গী-কালিগঞ্জ-ঘোড়াশালসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক।
ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল থেকেই যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যানজট। তবে সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় ঘরে ফেরার মানুষের চাপে সন্ধ্যার পর যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আর ভয়াবহ সেই যানজটের ধারাবাহিকতা ছুটির দিন শুক্রবারও দেখা গেছে। এদিন ভোর থেকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বাড়তে থাকে, আর বাড়তে থাকে যানজটও। ফলে মহাসড়কের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে দিনভর যান চলাচল ধীরগতি ও যানজট দেখা যায়।
যানজটের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার উত্তরায় যাননি ব্যবসায়ী শামসুজ্জামান মামুন। শুক্রবার খুব ভোরে রওনা হয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বেলা ১১টায় তিনি উত্তরার বাসায় পৌঁছান।
ঢাকার ব্যবসায়ী সোহাগ ব্যবসায়িক কাজে সকাল ৮টায় পুরান ঢাকা থেকে গাজীপুরের সালনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তিনি জানান, ঢাকার ভেতরের মোড়ে মোড়ে যানজট এড়িয়ে আব্দুল্লাহপুর আসতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে বাসটি চলতে থাকলেও প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।
যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষুব্ধ এক যাত্রী বলেন, গতকাল শুক্রবার ভোরে চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হয়েছি ঢাকার উদ্দেশ্যে। বেলা সাড়ে ১১টায় চিকিৎসকের সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত থাকলেও পথেই পুরো সময় নষ্ট হয়ে গেল। বাকি পথ গিয়ে চিকিৎসা শেষে ফেরার পর আবারও যানজটে সেই একই দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
প্রভাতী-বনশ্রী বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, উন্নয়ন কাজের ধীরগতির জন্যই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্ভোগ পোহালেও সড়ক নির্মাণে দ্রুতগতির তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। পুরো সড়কটি এখন যন্ত্রণার মনে হচ্ছে।
ময়মনসিংহগামী অপর বাসের চালক হামিদুল ইসলাম বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চাইতে ঢাকায় ঢুকতে ও বের হতে কয়েকগুণ সময় বেশি লাগছে। আমরা ট্রিপ অনুযায়ী টাকা পাই। সময় বেশি লাগলেও টাকা বেশি পাচ্ছি না।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন বলেন, কয়েকটি জেলার পরিবহন যাত্রী ও মালামাল নিয়ে টঙ্গীর বন্ধ হয়ে যাওয়া সেতু ধরে ঢাকায় প্রবেশ করতো। বৃহস্পতিবার আমরা ঢাকার গাড়িগুলো সরাসরি টঙ্গী বাজার এলাকার বেইলি সেতু দিয়ে গাজীপুরে প্রবেশ করিয়েছিলাম। আর গাজীপুরের গাড়িগুলো টঙ্গী মিল গেইট হয়ে কামারপাড়া সড়ক দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করিয়েছি। এর ফলে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর যানজট লেগে ছিল।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরবঙ্গের গাড়িগুলো সরাসরি টঙ্গী বাজার বেইলি সেতু দিয়ে ঢাকায় নিচ্ছি। আর ঢাকার গাড়িগুলো কামারপাড়া সড়ক দিয়ে গাজীপুরে প্রবেশ করছে। এতে কিছুটা সুফল পাচ্ছি আমরা। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশের সদস্যরাও সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন