গড়ে উঠেনি নিরাপদ বসতি
রাঙামাটি সংবাদদাতা: বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই রাঙামাটিতে বেড়ে যায় পাহাড় ধসের ঘটনা। পাহাড় ধসে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও নিরপাদ বসতি স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেই। ২০১৭ সালে রাঙামাটির কয়েকটি স্থানে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১৩১ জনের মৃত্যু হলেও সচেতন হয়নি কেউ। উল্টো এসব স্থানে গড়ে উঠেছে দ্বিগুণ অনিরাপদ বসতি।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পৌর এলাকায় ৩৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসহ পুরো জেলায় ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এবারের বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে ধসের আশঙ্কা রয়েছে। যদিও প্রশাসন বলছে, প্রাণহানি ও ভূমিধস এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তবে ঝুঁকি জেনেও পাহাড় ছাড়তে চাইছেন না সেখানকার বাসিন্দারা। তাদের দাবি, নিরুপায় হয়ে পাহাড়ে বসতি গড়ে তুলেছেন। তাদের যাওয়ার জায়গা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় তিন হাজার ৩৭৮ পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে।
স্থানীয় আমির হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হয়। এরপর বাসা ভাড়া দিয়ে থাকার পরিস্থিতি নেই। তাই কষ্ট করে অল্প টাকায় শিমুলতলী এলাকায় জায়গা কিনে বাসাবাড়ি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আছি। ২০১৭ থেকে বেশি বৃষ্টি হলে ভয় করে। তখন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাই। পাহাড় ছেড়ে আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই।
নতুনপাড়া এলাকার আরেক বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে পাহাড় ধসে আমার বড় ভাই মারা যান। বিপদ জেনেও পাহাড়ে বসবাস করছি। মরলে এখানেই মরবো, আর বাঁচলে এখানেই বাঁচবো। সারা বছর কেউ আমাদের খবর রাখে না। কেউ তো আমাদের জন্য নিরাপদ জায়গার ব্যবস্থা করে দেয় না। আমাদের কথা চিন্তা করার কেউ নেই।
মুসলিমপাড়া এলাকার গ্রামপ্রধান মিঠু মিয়া বলেন, সরকার যদি আমাদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে, পাহাড় ছেড়ে দেবো। আমাদের যাওয়ার জায়গা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছি।
তবে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, কেবল বর্ষা এলেই তৎপরতা বাড়ে প্রশাসনের। অথচ দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত পাহাড় ধসের ঘটনার পর দেওয়া সুপারিশগুলো। পাহাড়ে ঝুঁকিতে যারা বসবাস করছেন তাদের বিষয়ে আইন প্রয়োগে কঠোরতা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পরিহার ও আগে পাহাড় ধসের ঘটনায় সৃহীত সুপারিশমালা বাস্তবায়ন চায় সুশীল সমাজ।
রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করার কাজ করছি আমরা। প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লোকজনকে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকতে হয়। পাহাড়ের ঢালে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, স্থায়ী সমাধানের যেসব প্রস্তাব ছিল সেগুলো বাস্তবায়নে সময় লাগবে। তবে প্রাণহানি ও ভূমি ধস এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। পৌর এলাকাসহ ১০টি উপজেলায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলছে। বৃষ্টি শুরু হলেই লোকজন যেন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পৌর এলাকায় ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন