বিমানের অস্বাভাবিক ভাড়া কমানোর দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানিতে বিদেশগামী কর্মী ও সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে, তারমধ্যে বিমান টিকিটের দুষ্প্রাপ্যতা এবং টিকেটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অন্যতম। তাই অবিলম্বে এয়ার টিকিটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে এনে অসহায় কর্মীদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নির্ধারণ করতে হবে।
বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বায়রার সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে বিদেশগামী কর্মীদের এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বায়রার সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আগে যে বিমান টিকিটের মূল্য ছিল ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা সেই টিকিট এখন ৭৫-৯০ হাজার টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না। অতীতেও সুযোগ বুঝে অনেকবার এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে তখন থেকেই আমরা নানাভাবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে এলেও, যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টির কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিমান টিকেট নিয়ে বারবার এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমবাজার বিদ্যমান, কেবলমাত্র সেইসব দেশে যাতায়তের ক্ষেত্রেই বিমান টিকেটের দুষ্প্রাপ্যতা এবং অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে। এয়ারলাইন্সগুলো তাদের ইচ্ছামত অতিরিক্ত ভাড়া প্রবাসগামীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কোনো সংস্থা তদারকি করছে বলে মনে হচ্ছে না। আমাদের প্রতিবেশি দেশ নেপাল, ভারত, শ্রীলংকার তুলনায় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিমানের ভাড়া কয়েকগুণ বেশি। ঢাকা থেকে ছয় ঘণ্টার জার্নি রিয়াদে যেতে ভাড়া লাগে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা অথচ ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক ২৩ ঘণ্টার জার্নিতে ভাড়া লাগছে মাত্র ৬৫ হাজার টাকা।
বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যাত্রী বাংলাদেশ বিমানে যাতায়াত করলেও, অবশিষ্ট প্রায় ৮০ শতাংশ যাত্রী বিদেশি বিমানে যাতায়াত করে থাকে। দেশীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমান নিজেদের লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন সেক্টরে অপ্রয়োজনীয় মূল্য বৃদ্ধি করে। ফলে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বিমানকে অনুসরণ করে পাল্লা দিয়ে ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকে। ফলশ্রুতিতে টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সুযোগে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে নিষ্পেষিত হচ্ছে প্রবাসগামী নিরীহ কর্মীরা। একইসঙ্গে মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশ। এমন অবস্থায় আমাদের স্পষ্ট দাবি, বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে অবিলম্বে এয়ার টিকিটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে এনে অসহায় কর্মীদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নির্ধারণ করতে হবে।
এ সময় সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের তদারকি মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা, বর্তমানে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার অপেক্ষমান বিদেশগামী যাত্রীদের সংকট সমাধানের জন্য অনতিবিলম্বে স্পেশাল ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা, কোন ট্রাভেল এজেন্সির কাছে কোনো অগ্রিম টিকিট ইস্যু না করে সব এয়ারলাইন্সের অবিকৃত আসন দৃশ্যমান রাখা, বিদেশগামী কর্মীদের জন্য লেবার ফায়ার চালু করা, দেশের বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানকে ভাড়ার মডেল তৈরি করে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে সেটি অনুসরণের উদ্যোগ নেওয়া, কোন গন্তব্যে হঠাৎ যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সেই রুটে বিমান বাংলাদেশকে যথাশিগগির স্পেশাল ফ্লাইটের ব্যবস্থা নেওয়া এবং সিভিল এভিয়েশনের কার্যকরী ভূমিকার মাধ্যমে বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মাইলস নীতিমালা অনুসরণ করা।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন