‘বাস্তবতায় সাহসী পদক্ষেপ ‘মাতারবাড়ী’
নিউজ ডেস্ক : দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে অসীম সম্ভাবনার নাম বঙ্গোপসাগর। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্রমশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ উপসাগর। একসময় বঙ্গোপসাগরের ভৌগোলিক অবস্থানের কৌশলগত গুরুত্ব কাজে লাগিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে দরকষাকষির পুরোটা সুবিধাই ভোগ করে আসছিল ভারত। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সম্পাদিত চুক্তির সূত্রে বঙ্গোপসাগরে ভাগ বসাতে যাচ্ছে চীন। ভৌগোলিক কারণে সাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার এ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশও।
ভূ-রাজনীতির কঠিন এ বাস্তবতায় চলতি মাসেই কক্সবাজারের মহেশখালীতে ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প’র প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাস হতে যাচ্ছে। এটি সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর একটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ভারত ও মিয়ানমার ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই সম্পন্ন হয় বঙ্গোপসাগর দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গোপসাগর উপকূলে একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ভূ-রাজনীতির কারণে তা এতদিন সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
ভারত মহাসাগরের উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের সামগ্রিক আয়তন প্রায় ২২ লাখ বর্গকিলোমিটার। শ্রীলঙ্কার উপকূলবর্তী এলাকা থেকে বেড়ে উঠে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বাঁক ঘুরে এর বিস্তার থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মানচিত্র বরাবর দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া উত্তরে সুমাত্রা অবধি। বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ লোক বাস করছে এ সাগর ঘিরে থাকা দেশগুলোতে। এছাড়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুটি অর্থনৈতিক জোটের মেলবন্ধ তৈরি করেছে বঙ্গোপসাগর।
ব্রিটিশ পেট্রলিয়ামের এক জরিপে জানানো হয়েছে, বিশ্বের মোট তেল ও গ্যাস মজুতের এক শতাংশ (প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট) লুকিয়ে আছে ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূল বরাবর সাগরের তলদেশে। এসব কারণে নিজেদের আধিপত্য সৃষ্টি করতে বা ধরে রাখতে একদম শুরু থেকে বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন নিয়ে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামে চীন, জাপান ও ভারত। এছাড়া নিজেদের স্বার্থেই যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্য থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ক্রমশ দক্ষিণএশীয় অঞ্চলের ওপর সামরিক ও রাজনৈতিক মনোযোগ নিবদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিপুল সম্ভাবনার বঙ্গোপসাগরে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও উপস্থিতি জরুরি মনে করছে পরাশক্তিগুলো।
স্বাধীনতার পর থেকে বঙ্গোপসাগরে নিজের অবস্থান মজবুত করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায় রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন ও ভারতকে। একদম শুরুতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে পেতে রাখা মাইন অপসারণে সহায়তা দিয়ে বন্দর চালু করতে সাহায্য করে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর মধ্য দিয়ে তাদের প্রত্যাশা ছিল পরবর্তীতেও বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়া।
বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ তেল আমদানিকারক দেশ চীন। তার এ তেলের ৮০ শতাংশ পরিবাহিত হচ্ছে মালাক্কা প্রণালি দিয়ে। মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা চীনের এ তেল মালাক্কা প্রণালিতে প্রবেশ করে আমাদের বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়েই। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে চীন সাগর, মালাক্কা প্রণালি হয়ে যাতায়াতের দূরত্বও অনেক বেশি। মালাক্কা প্রণালির অন্য প্রান্তে রয়েছে দক্ষিণ চীন সাগর। চীন ও জাপান উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ পথ। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তারে ইতোমধ্যে তার সঙ্গে চরম বিরোধের সূত্রপাত ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের। তাই শুরু থেকে চীন মালাক্কা প্রণালির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এ পথ এড়িয়ে তার বাণিজ্যের বড় অংশ বঙ্গোপসাগর উপকূল দিয়ে করতে চাইছিল।
চীন তাদের বাণিজ্যের পথ নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করার কৌশল হিসেবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নামে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। যেখানে বাংলাদেশ তাদের সমুদ্র উপকূলবর্তী এজেন্ডার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ পরিকল্পনায় চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত স্থল-করিডোর নির্মাণের পরিকল্পনা সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়। ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম এ চাঞ্চল্যকর বিষয়টি সামনে আসলে বাংলাদেশ একটি অনিরাপদ ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায়।
প্রথমে চীন চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। দেশটি চট্টগ্রাম বন্দরকে বিস্তৃত ও আধুনিকায়নের জন্য ২০১০ সালে নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখানে সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় বন্দরের গভীরতা। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান গড় গভীরতা ৯.২ মিটার, যা বর্তমান আধুনিক কার্গো জাহাজ ভেড়ার মতো গভীর নয়। এর সমাধানকল্পে পতেঙ্গা উপকূলে বে-টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। যেখানে ১৩-১৪ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ সরাসরি ভিড়তে পারবে।
এদিকে চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্রবন্দর পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে পারে জেনে ২০০৯ সালে কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে একটি সমীক্ষা চালায় চীন। এ সমীক্ষা থেকে জানা যায়, সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা সম্ভব। চীন সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়। বাংলাদেশও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে দারুণ আগ্রহী ছিল। বলতে গেলে, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বিভিন্ন মহলে এ আলোচনা রয়েছে যে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী কোনো কোনো দেশের আপত্তির কারণে সরকার শেষ সময়ে চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর থেকে সরে আসে।
তবে চীন তাদের পরিকল্পনা থেকে সরে যায়নি বরং মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে তারা বঙ্গোপসাগরে পা রাখতে যাচ্ছে। গত শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চি চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৩৩টি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির অন্যতমটি হলো, চীন মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে ১৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করবে। এছাড়া সীমান্তে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) এবং বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ইয়াঙ্গনে নতুন একটি শহর গড়ার প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশকে এড়িয়ে চীনের বঙ্গোপসাগরে পা রাখার বিষয়টি দেশের জন্য ‘বড় ক্ষতি’ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম।
তিনি জানান, ‘সোনাদিয়া ছিল গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য বেস্ট অপশন। ওখানে প্রাকৃতিকভাবে ১৫ মিটার গভীরতার একটি খাঁড়ি আছে, যা আল্লাহর দান। কিন্তু আমরা সেটা থেকে বঞ্চিত হলাম। তবে চীন তাদের ক্ষতিটা ওভারকাম করে ফেলেছে। চীন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকফিউয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে।’
তবে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে চীন বা রাশিয়ার থেকেও ভারতের আগ্রহ সবসময় বেশি ছিল। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার জন্য স্বাধীনতার পর থেকে দেনদরবার চলছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। যদিও চলতি মাস থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ট্রান্সশিপমেন্ট শুরুর কথা রয়েছে। এর মধ্যেই ভারত তাদের ‘কালাদান মাল্টি মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’র অংশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরের তীরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তেতে কালাদান নদীর মোহনায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি করে। ভারতের প্রস্তাবিত কালাদান মাল্টি মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সরবরাহের জন্য একটি বিকল্প রুট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কিয়াউকফিউয়ে চীনের গভীর সমুদ্রবন্দর হলে ভারত নির্মিত সিত্তে বন্দরের গুরুত্ব কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এছাড়া প্রস্তাবিত ‘চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর’-এর মাধ্যমে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে চীন সংযুক্ত হচ্ছে। ফলে মালাক্কা প্রণালি দিয়ে সাগরপথে চীনের বাণিজ্য রুটের বাইরেও মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছার পথ পাচ্ছে চীন। মিয়ানমারে চীনের প্রকল্পগুলোর ফলে নিঃসন্দেহে বঙ্গোপসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মতৎপরতা বাড়বে।
বঙ্গোপসাগর ঘিরে পরাশক্তিগুলো যখন পরস্পর মুখোমুখি, তখন এ উপসাগরের অন্যতম হিস্যাদার বাংলাদেশ বসে নেই। ভূ-রাজনৈতিক কারণে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর না হলেও আশার নতুন দিগন্ত হয়ে ধরা দেয় কক্সবাজারের মাতারবাড়ী।
বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এ যাবৎ জাপানের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ বিগ-বি। বিগ-বি হলো বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট। এর আওতায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপানের সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কোল জেটি করতে গিয়ে সেখানে একটি বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা দেখতে পায়। মাতারবাড়ী অঞ্চলে সমুদ্রের গভীরতা ১৫.৩ মিটার। তবে খনন শেষে প্রাথমিকভাবে মাতারবাড়ী চ্যানেলে সারাবছরই ন্যূনতম ১৬ মিটার গভীরতা পাওয়া যাবে। চ্যানেলের বাইরে সাগরের গভীরতা ৩০ মিটার। ফলে এ বন্দরে অনায়াসে বড় আকৃতির মাদার ভেসেল নোঙর করতে পারবে।
ইতোমধ্যে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরের মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ১৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্রবন্দরের জন্য বড় দুটি জেটি নির্মাণকাজ শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের শেষনাগাদ এ বন্দর চালু হবে বলে আশা করছে সরকার।
গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বন্দর এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিফুল ইসলাম জানান, মাতারবাড়ী বন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চলতি মাসের মধ্যেই পাস হতে পারে।
মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক কোনো জটিলতা আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে রফিফুল ইসলাম বলেন, ‘না, এ ধরনের কোনো জটিলতা থাকলে কাজ হতোই না। কাজ চলছে এর অর্থ হলো, এখানে কোনো জটিলতা নেই। ভূ-রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক এখানে এ মুহূর্তে নেই। আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটা আমরা করছি। এখানে কারও ক্ষমতা নেই আমাদের বাধা দেয়ার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। এখানে কেউ তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারবে না।’
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর অন্য যেকোনো আঞ্চলিক বন্দরের তুলনায় ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের চাহিদা পূরণে অধিকতর সুবিধা দেবে। বেশিসংখ্যক দেশ এ বাণিজ্যিক বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। ভারতের সেভেন সিস্টার্স (উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য), কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর, মিয়ানমার, স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটান তাদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে এ বন্দর ব্যবহারে আকৃষ্ট হবে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে অবস্থানের কারণে আশিয়ান ও উপসাগরীয় দেশগুলোরও এ বন্দর ব্যবহারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া তেল-গ্যাস ও অন্যান্য সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম জানান, ‘মাতারবাড়ী হবে সোনাদিয়ার বিকল্প। এ কারণে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে থাকব বলে মনে করি না। ওখানে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব হবে। মাতারবাড়ীতে আমাদের একটি চ্যানেল তৈরি করে নিতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যায় কিছুটা বাড়লেও ১৫-১৬ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ সরাসরি ভিড়তে পারবে। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি বাংলাদেশের সাহসী পদক্ষেপ।’
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন