নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা: বিপৎসীমার ওপরে তিস্তা-পদ্মা-যমুনার পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক: সুরমা ছাড়া দেশের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছেই। তিস্তা, পদ্মা, যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পরিস্থিতি সম্পর্কিত প্রতিবেদনে এ শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সুরমা ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
তিস্তার পানি বাড়ায় ১৭টি গ্রাম প্লাবিত, ৬৩ চরে বন্যার আশঙ্কা:
টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং ভারতের গজলডোবার সব কটি গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তা ব্যারাজে নদীর পানি আবারও বাড়ছে। এতে তিস্তা ও ধরলা নদীর আশপাশের চরের গ্রামগুলোতে টানা সাতদিন ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। ৬৩ চরে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ব্যারাজ রক্ষায় খুলে দেয়া হয়েছে ৪৪টি গেট। এতে জেলার চরাঞ্চলের ১৭টি গ্রাম এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ‘গত ১৩ আগস্ট থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমার ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। গত ১০ দিন দুই নম্বর ওয়ার্ডের চিলমারী পাড়ার দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। পরিবারগুলো সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, আমন ধানের ক্ষেতসহ এলাকার বেশকিছু রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বসতবাড়িগুলোতে হাঁটু পানি। চুলায় রান্না করে খেতে পারছে না। শুকনা খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুটের ওপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা-ধরলায় পানি বাড়ায় প্রায় ৩১টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে:
রাজবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর পানি দুটি পয়েন্টে এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়া এই দুটি পয়েন্ট হলো রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ও পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্ট।
রাজবাড়ীতে পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তবে বাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি ও বসতি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। ফলে ভোগান্তি পড়ছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ।
জানা যায়, প্রতিবছর বন্যার শুরুতে প্লাবিত হয় গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোট ভাকলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। এছাড়া বন্যার পানিত প্লাবিত হয় রাজবাড়ী সদরের বরাট, মিজানপুর, চন্দনী, খানগঞ্জ এবং কালুখালীর রতনদিয়া, কালীকাপুর ও পাংশার হাবাসপুরের ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা।
ওই সব এলাকার ফসলি জমি, বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। দেখা দেয় পানিবাহিত রোগসহ বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গবাদিপশুর খাদ্যসংকট। এ সময় অসহায় ও দরিদ্র পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন