দিনে শ্রমিক, রাতে তারা ঘাগু চোর
নিজস্ব প্রতিবেদক: কেউ মিস্ত্রী, কেউ ফল বিক্রেতা, কেউবা অটোরিকশা চালক। দিনে পরিশ্রমী সহজ মানুষের পরিচয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা রেকি করে তারা। আর রাত হতে না হতেই হয় একজোট। তারপর সংঘবদ্ধ চোরচক্রটি দুর্ধর্ষ সব চুরিতে জড়ায়।
এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৬-৭ জন। ফাঁকা বাড়িই তাদের লক্ষ্য। এমনই ধানমন্ডির একটি ফাঁকা বাসায় গত ৬ ডিসেম্বর রাতে চুরির পরিকল্পনা করে তারা। ভাড়া করা মেসে চোরচক্রের ৫ সদস্য পরিকল্পনা করার জন্য একত্রিত হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক ৭ ডিসেম্বর রাতে চুরি করে সেই বাসায়।
চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ওই চুরির মূলহোতাসহ চোর চক্রের ৪ জনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-২ এর একটি দল। উদ্ধার করেছে চুরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ও চোরাইকৃত আলামত।
শনিবার কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ধানমন্ডির একটি বাসার জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় চোর দলের সদস্যরা আলমারি, ওয়ারড্রব ভেঙে প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
চুরির ঘটনাটি প্রবাসে অবস্থানরত বাড়ির মালিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখতে পান এবং পরবর্তীতে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করলে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ওই ঘটনায় র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় জুমুয়াবার (১০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে র্যাব-২ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এবং ঢাকা উদ্যান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোর চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার করে।
অভিযানে চুরির কাজে ব্যবহৃত ২টি দেশীয় অস্ত্র, ৪টি মোবাইল, ২টি পরিধেয় বস্ত্র, নগদ ৪ হাজার ৮০০ টাকা এবং বাসা থেকে চুরিকৃত গলিত স্বর্ণের বার এবং ৪টি অলঙ্কার উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা চুরির সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানিয়েছে, তারা ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর এলাকা কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। গ্রেফতাররা সকলেই বিভিন্ন পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন যাবত সংঘবদ্ধভাবে চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ করে আসছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা র্যাবকে জানায়, চুরির পরদিন সকালে তারা চুরিকৃত স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে তাদের পূর্ব পরিচিত গ্রেফতার আজাদের স্বর্ণের দোকানে যায় এবং ৫০ হাজার টাকায় চুরিকৃত স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে সেই টাকা নাসির, ফরহাদ এবং সেলিমসহ দলের আরও ২ জন নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। গ্রেফতার আজাদ স্বর্ণালঙ্কার কেনার সাথে সাথে তা গলিয়ে ফেলে।
গ্রেফতার নাসির পেশায় একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। সে ৫/৬ বছর যাবত তার পেশার আড়ালে চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে। ধানমন্ডির বাসায় চুরির ঘটনায় গ্রিল কাটার পর সর্বপ্রথম সে বাসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। তার নামে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় চুরি ও ছিনতাই এর অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার ফরহাদ পেশায় একজন ফল বিক্রেতা। সে এই চোর চক্রের অন্যতম একজন সদস্য। ধানমন্ডির বাসায় চুরির ঘটনায় তাকে বাসার ভিতর টর্চ লাইট দিয়ে আলো ফেলতে এবং গ্রিল কাটতে দেখা যায়। ইতোপূর্বে তাকে পুলিশ কর্তৃক সন্দিগ্ধ হিসেবে ২০১৭ সালে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত সেলিম পেশায় সবজি বিক্রেতা। সেও চক্রটির একজন নিয়মিত সদস্য। ধানমন্ডির বাসায় চুরির ঘটনায় সে সানশেডে অবস্থান করে গ্রিল কাটতে সহায়তা করে।
গ্রেফতার আজাদ একজন স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ী। রাজধানীর বছিলায় তার একটি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এই ব্যবসার পাশাপাশি চোরাই স্বর্ণালঙ্কার ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে জড়িত সে। জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, সে এর আগেও চুরি এবং ছিনতাইকৃত স্বর্ণালঙ্কার কম দামে কিনে বেশি লাভে বিক্রি করেছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন