চামড়ার দাম কি আর ফিরবে না?
নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানির ঈদে পশুর চামড়ার দাম নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই নানা ধরণের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র দেখছে দেশের মানুষ। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এবারও সেই ধারা চলবে।
কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক কম দামে কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। লাখ টাকা দামের গরুর চামড়াও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। লাখ লাখ টাকার চামড়া পচে নষ্ট হওয়ার ঘটনাও আছে। বহনের খরচও না ওঠায় রাস্তার ধারে চামড়া ফেলে দিয়ে যাওয়ার ঘটনা তো প্রতিবছরই আছে।
সরকার প্রতিবছর চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও তা কোনো কাজে আসে না। অদৃশ্য এক সিন্ডিকেটের ফাঁদে হাবুডুবু খাচ্ছে কাঁচা চামড়ার ঈদের বাজার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাঁচা চামড়া সংগ্রহের জন্য আড়তগুলো ধোয়া মোছার কাজ চলছে। কেউ লবণ সংগ্রহ করছেন। কারণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের অন্যতম উপকরণ লবণ।
আড়তদাররা বলছেন, এবারও তারা আশঙ্কায় আছেন। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করলে তারা চামড়া সংগ্রহ করতে পারবেন না।
শাহাদাত লেদার আড়তের মালিক রাশিদুজ্জামান রাশেদ বলেন, ট্যানারি মালিকেরা চামড়া নিয়ে যায় কিন্তু টাকা দেয় না। তারা আমাদের টাকা না দিয়ে সাভারে ট্যানারির ভবন তৈরি করে। অথচ আমাদের পাওনা দেয় না। পাওনা টাকা না দিলে চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএসএমএ) সূত্র জানিয়েছে, লালবাগ পোস্তায় মোট ১৫০টি কাঁচা চামড়া সংগ্রহের আড়ত রয়েছে। এসব আড়তে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেড় থেকে দুই লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এসব আড়ত থেকে ১৫০ কোটি টাকার কাঁচা চামড়া নিয়েছেন ট্যানারি মালিকেরা। কিন্তু ২০১৭ সালের পর এখনো কাঁচা চামড়া বাবদ টাকা পরিশোধ করেনি। বিধায় আসন্ন কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ নিয়ে বিপাকে আড়তদারেরা।
বিএইচএসএমএ সভাপতি আফতাব খান বলেন, ট্যানারি মালিকেরা আমাদের কাছ থেকে চামড়া নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেইভাবে টাকা পরিশোধ করে না। এখনো ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পোস্তার আড়তদাররা ১৫০ কোটি টাকা পাবে। এসব টাকা না পেলে আসন্ন ঈদে চামড়া সংগ্রহ কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের কাছে নাটোর, রাজশাহী ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চামড়া দিয়ে গেছে। ট্যানারির মালিকেরা টাকা দিতে পারছে না বলে আমরা প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের টাকা না দিলে চামড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে সংগ্রহ হবে না। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের বলেছি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, লবণের দাম হঠাৎ বেড়ে যায় কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন আড়তদাররা। বর্তমানে এক বস্তা লবণ (৭২ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। চামড়ায় লবণ দেওয়ার জন্য হাজারো শ্রমিক ময়মনসিংহ ও রংপুর থেকে পোস্তায় আসেন। এসব শ্রমিক এবার আসতে না পারলে চামড়া সংরক্ষণ হুমকির মধ্যে পড়বে।
কাঁচা চামড়ার আড়তদার হাজী অ্যান্ড সন্সের মালিক মাসুম ক্বারী বলেন, কাঁচা চামড়া নিয়ে আমরা অনেক ভয়ে আছি। বাপ দাদার ব্যবসা, তাই ঈদের সময় লোভ সামলাতে পারি না। কিন্তু চামড়া কিনবো কিভাবে? ট্যানারি মালিকেরা তো আমাদের বকেয়া পরিশোধ করে না।
দেশের ট্যানারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) জানায়, বকেয়া না পাওয়ার অভিযোগ পুরনো। ব্যবসা করতে গেলে বকেয়া থাকবেই। দুই চারটি ট্যানারি দেউলিয়া হয়ে গেছে। শুধু তাদের কাছ থেকেই পোস্তার আড়তদাররা টাকা পাবেন।
বিটিএ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, যে সব ট্যানারির মালিকেরা দেউলিয়া হয়ে গেছেন, তারা বকেয়া পরিশোধ করতে পারেননি। এগুলো পুরনো অভিযোগ। ঈদ এলেই আড়তদাররা এসব পুরনো অভিযোগ সামনে এনে বসে থাকে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন