কাজ পাচ্ছেন না নির্মাণশ্রমিকেরা, মজুরি কমে অর্ধেক
নিজস্ব প্রতিবেদক: লকডাউনে একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে চাকরি হারান রংপুরের হাসান। দুই সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে চার সদস্যের সংসার তার। চাকরি হারানোর পর পরিবারের অন্ন জোগাতে বাধ্য হয়েই শুরু করেন সবজির ব্যবসা। তবে পর্যাপ্ত পুঁজি না থাকায় সে ব্যবসাও টেকেনি বেশিদিন। এরপর একটি নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এইচএসসি পাস হাসান অল্পদিনেই মিস্ত্রি হয়ে ওঠেন। এসময় খাবারের বিলসহ প্রতিদিন তার আয় ছিল ৭শ টাকা। এ টাকায় চার সদস্যের সংসার বেশ ভালোই চলছিল। কিছু টাকা জমিয়ে গ্রামে ছোট একটি বাড়িও করেন। সবকিছু মোটামুটি ঠিকঠাক চলছিল। তবে তার সাজানো সংসারে হঠাৎ নেমে এলো কালো মেঘ।
দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে নির্মাণসামগ্রীর দাম। যে ভবন নির্মাণে কাজ করছিলেন হাসান, নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় সেটি আর চালিয়ে যেতে পারেননি ভবন মালিক। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে আর কাজও পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় সংসার চালাতে আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগানোর চিন্তায় দিশেহারা তিনি। অন্যদিকে যত দিন গড়াচ্ছে ততই নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে ঋণের পাল্লা ভারী হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো এ শহর ছেড়েই চলে যেতে হবে তাকে।
একই কথা বলেন টাইলস মিস্ত্রি ও হাসানের বড় ভাই হামিদ। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে রডের দাম বাড়ায় দেশীয় কোম্পানিগুলো অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর দামও বাড়িয়েছে। এতে লোকসানের আশঙ্কায় আবাসন কোম্পানিগুলো আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছে। কবে আবার কাজ পুরোদমে চলবে কি না জানি না। দু’একটি কাজ থাকলেও মজুরি কম। আগে যেখানে দিনে ৭শ টাকা পেতাম, এখন সেটা ৩শ থেকে ৩৫০ টাকায় করতে হয়। এ কাজও আবার অনিয়মিত।
‘কাজ বন্ধ থাকায় আমাদের পথে বসার উপক্রম। কখনো কারও কাছে হাত পাতিনি। কিন্তু এখন কাজ না থাকায় হাতে পয়সা নেই। বাধ্য হয়ে টিসিবির ট্রাকের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পরিবারের জন্য পণ্য কিনি।’
এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা ড. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন নির্মাণশ্রমিকরা। সীমিত আকারে হলেও এসব শ্রমিকদের সহযোগিতা করা দরকার। প্রয়োজনে স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেটা পরিশোধযোগ্য। আবাসন শিল্পে জড়িত ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে এমন প্রস্তাব দিতে পারেন, যাতে আর্থিক সহায়তা পান তারা।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের অভুক্ত রেখে কোনো খাত চলতে পারে না। নিম্ন আয়ের মানুষ ও শ্রমিকদের সবাই যেন নিত্যপণ্য পান- এটা সরকারকে দেখতে হবে। তারা (শ্রমিকরা) টিসিবির রেশন কার্ড যেন পান এটা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) দপ্তর সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, দেশের নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক কন্সট্রাকশনের কাজ বন্ধ রয়েছে। আর কাজ বন্ধ থাকায় দেশের ৪০ লাখ ইমারত নির্মাণশ্রমিকের মধ্যে এখন বেশিরভাগ শ্রমিকই বেকার। যারা কাজ করছেন, তাদের মজুরিও কমেছে। এ অবস্থা সাময়িক হলেও শ্রমিকদের সহযোগিতা করতে হবে মালিকপক্ষেকে। একই সঙ্গে সরকারও এসব শ্রমিকদের জন্য সাময়িক অর্থসহায়তা (ফেরতযোগ্য লোন) দিতে পারে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন