কাউন্সেলিংয়ে বাড়ছে নরমাল ডেলিভারি
নিউজ ডেস্ক: কুমিল্লার সরকারি হাসপাতালগুলোতে গর্ভবতী নারীদের নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অপ্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে নিরুৎসাহিত করছেন চিকিৎসকরা। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে নারীদের।
আধুনিক এই যুগে জীবনমান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে অনেকগুন। এক সময় প্রসবকালে ব্যথার অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর মুনাফার লোভ এবং মা ও তার পরিবারের অসচেতনতার কারণেই সিজারিয়ান অপারেশনে আগ্রহ বাড়ে নারীদের। কমতে থাকে নরমাল ডেলিভারি।
তবে কুমিল্লার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ব্যতিক্রম ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে কুমিল্লার ১৬ উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোর গাইনি বিভাগে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ৪ হাজার ২০৫ জনের। একই সময় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে মাত্র ৬৮০ শিশু।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৮১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৪ জন, মার্চে ৩৬২ জন, এপ্রিলে ৩২৯ জন, মে মাসে ৩১৭ জন, জুনে ৩৫২ জন, জুলাইয়ে ৩২৩ জন, আগস্টে ৩৩৪ জন, সেপ্টেম্বরে ৪৬০ জন, অক্টোবরে ৫০১ জন ও নভেম্বরে ৫১২ জন শিশু নরমাল ডেলিভারিতে জন্মগ্রহণ করে।
এদের মধ্যে চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ২৮২ জন, নাঙ্গলকোটে ২১৩ জন, লাকসামে ২১০ জন, মনোহরগঞ্জে ৩ জন, বরুড়া ২১৩ জন, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৭ জন, কুমিল্লা সদরে ১২৫ জন, চান্দিনায় ২৮০ জন, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৩৬৮ জন, বুড়িচংয়ে ২২৪ জন, দেবীদ্বারে ৩৪৮ জন, মুরাদনগরে ২৯০ জন, হোমনা উপজেলায় ২৯৪ জন, তিতাস উপজেলায় ১৪৯ জন, মেঘনা উপজেলায় ১৫ জন ও দাউদকান্দি উপজেলায় এক হাজার ১৮৪ জন।
চিকিৎসকরা বলছেন, যাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন- ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেশার ইত্যাদি আছে এবং বাচ্চা আকারে বড় হয়ে গেলে, বাচ্চার হার্টরেট বেড়ে গেলে বা কমে গেলে নরমাল ডেলিভারি মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রে সিজারিয়ান ডেলিভারি করে থাকেন তারা।
স্বাভাবিক প্রসব মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই অনেক ভালো। এখন ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক প্রসব করা হচ্ছে। ডেলিভারির ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মায়েদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া সম্ভব। যেহেতু নরমাল ডেলিভারিতে ঝামেলা কম, তাই মায়েরা খুব দ্রুত শিশুদেরকে বুকের দুধ পান করাতে পারেন এবং খুব শিগগিরই স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করতে পারেন।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীরা প্রাথমিকভাবে মাঠ পর্যায়ে গর্ভবতী নারীদের খুঁজে বের করেন এবং নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কে তাদের কাউন্সেলিং করা হয়। নিরুৎসাহিত করা হয় সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে। চতুর্থ মাস থেকে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সার্বিক বিষয়ে আমাদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে সময় মতো নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা করা হয়।
তিনি বলেন, গত ১১ মাসে আমরা বিনামূল্যে এক হাজার ১৮৪ জনের নরমাল ডেলিভারি করিয়েছি। আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে ২৬৫ জনের। যা জেলার ১৬ উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ধারা অব্যাহত রাখতে নিরলসভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, সরকার প্রসূতিদের চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তারই আলোকে আমরাও রোগীদের কাউন্সেলিং করছি। আশা করছি কুমিল্লার প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়বে। সেজন্য আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন