৫০ হাজার টাকা খরচে আয় দেড় লাখ
কক্সবাজার সংবাদদাতা: সাধারণ বিলের ক্ষেত ছাড়াও তরমুজ চাষের বিস্তৃতি এখন সৈকতের বালুচরে। এক সময়ের পরিত্যক্ত ঝাউবিথী সংলগ্ন ধুধু বালুচর এখন আর খালি নেই। সেখানে প্রতিবছর চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের তরমুজ। বালুচরে স্বল্প পুঁজিতে তরমুজ চাষ করে দ্বিগুণ লাভে হাসি ফুটেছে কৃষক পরিবারে।
রশিদ মিয়া। পঞ্চাশোর্ধ এই কৃষকের বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া উপকূলীয় এলাকায়। সম্প্রতি তিনি সোনাদিয়া বালুচরের ৫ একর অনাবাদি জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো। ইতোমধ্যে রশিদ মিয়া ওই ক্ষেত থেকে ৫ দফায় দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এখনও ক্ষেতে যা ফলন আছে, তা আরো দুই দফা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
রশিদ মিয়া বলেন, ‘বালুচরে তরমুজ চাষে ঝুঁকি কম। বৃষ্টিতে কৃষিজমির তরমুজ ক্ষেত ঝুঁকিতে থাকে। কিন্তু বালুচরে সেই ঝুঁকি নেই। সোনাদিয়ার বালুচরে অন্তত ১০০ একর জমিতে এবার ৫০-৬০ জন কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। তাদের সবাই লাভবান হবে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি শেষ।’
তিনি আরো বলেন, মাত্র ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তরমুজ চাষের সিদ্ধান্ত নেই। আল্লাহর উপর ভরসা করে লাভ-ক্ষতির কথা চিন্তা না করে চাষ শুরু করি। অভিজ্ঞ কৃষকদের কথা মতো পানি সেচ ও পুষ্টি জাতীয় এবং কীটনাশকের সার প্রয়োগ করি। তাদের পরামর্শ মতো চাষ করে এই মৌসেুমে ৫ দফায় ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। আল্লাহ সহায় হলে আরো দুই দফা তরমুজ বিক্রি করতে পারবো।’
রশিদ মিয়ার মতো সোনাদিয়া বালুচরে আরো অর্ধশতাধিক চাষি তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছে। তরমুজের বাম্পার ফলনে তাদের সবার মুখে হাসি ফুটেছে।
সোনাদিয়া পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা তরমুজ চাষি মোহাম্মদ হানিফ (৩১) বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আমি নিজেও তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছি। এছাড়া অন্য চাষিদের কাছ থেকে পাইকারি দরে গড়ে ১২০ টাকা করে তরমুজ কিনে মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ কক্সবাজার শহরে নিয়ে গিয়ে ভালো দামে বিক্রি করেছি। বিস্তীর্ণ বালুচরে সবুজ লতায় মোড়ানো এসব তরমুজ খুবই রসালো। এবং একেকটি তরমুজের ওজন ৮-৯ কেজি বা তার চেয়ে বেশি হয়।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘সমুদ্র তীরবর্তী সোনাদিয়া বালুচরে তরমুজ চাষাবাদে কৃষকদের সাফল্য এসেছে। সেখানকার তরমুজের স্বাদ অনেক ভালো। আগাম চাষের কারণে তারা দ্বিগুণের চাইতেও বেশি দাম পাচ্ছেন। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই তারা তরমুজ বিক্রি শুরু করতে পেরেছেন। লাভ আসায় কৃষকরা তরমুজ চাষে উৎসাহি হচ্ছেন।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তরমুজ চাষের পাশাপাশি এক সময়ের অনাবাদি এই বালুচরে এখন ধানের চাষাবাদ হচ্ছে। স্বল্প পরিসরের চাষে ফলন ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। বাজারদর ভালো থাকায় এখন এই অঞ্চলের আর কেউ বসে নেই। তরমুজ ও অন্য কৃষিজাত পণ্য চাষে উদ্যোগী সবাই।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন