গেরুয়াকরণের জোয়ার উঠেছে ভারতের উত্তর প্রদেশে
সাস নিউজ ডেস্ক: বারবার ‘সবার সাথে, সবার উন্নয়ন’ বলে শ্লোগান ও উত্তর প্রদেশকে উন্নয়নের পথে রাখার দৃঢ় ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ তার কট্টর হিন্দুত্ববাদি এজেন্ডা বাস্তবায়নের কোন চেষ্টাই বাদ রাখছেন না। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটিতে সাত মাস আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গেরুয়া বসনধারী পুরোহিত থেকে বিজেপি নেতায় রূপান্তরিত আদিত্যনাথ তার হিন্দুত্ববাদি অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত রাখতে অনেক সুক্ষ্ম উপায় আবিস্কার করেছেন। খবর -সাউথ এশিয়ান মনিটরের।
‘লাভ জিহাদ’ ও ‘ঘর ওয়াপসি’র মতো বহুল বিতর্কিত ইস্যু সৃষ্টি করেছেন, গরু জবাই নিষিদ্ধ করেছেন – এগুলো বেশ দক্ষতার সঙ্গে তার হিন্দুত্বাবাদি মেরুকরণকে শানিত করেছে। রাজ্যটি যখন নগর নির্বাচনের পথে তখন তিনি তার উদ্দেশ্য হাসিলের আরেকটি নতুন পন্থা খুঁজে পেয়েছেন। গত সপ্তাহে বৃন্দাবন ও বরসনাকে তীর্থস্থান বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অযোদ্ধা, বেনারস, এলাহাবাদ, এমনকি মথুরার মতো অনেক বেশি জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থানগুলোকেও ওই বিশেষ খেতাব দেয়া হয়নি।
এর ঘোষণার পর ওই আরাধনা ক্ষেত্রগুলোতে মদ ও মাংসের দোকান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক পর্যটনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
রাজ্যটির সড়কগুলো গর্তমুক্ত এবং রাজ্যটিকে অপরাধ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে আদিত্যনাথ কয়েক মাস আগে যে ঘোষণা দেন তার বাস্তবায়নে ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই তিনি এগুলো করছেন কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে।
গেরুয়া বসনের প্রতি অনুরাগ নিশ্চিতভাবে তার হিন্দুবাদি মিশনের একটি অংশ। এই গেরুয়া রংটি হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসী রূপেরও বহি:প্রকাশ। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়টিও গৈরিক রংয়ে রাঙ্গানো হয়েছে।
১৯৮২ সালে যখন এই ভবন নির্মাণ করা হয় তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। তখন থেকে বহু বছর এর রং ছিলো অফ-হোয়াইট। বহুজন সমাজবাদি নেতা মায়াবতি এসে ওই রং বদলান। ২০০৭-২০১২ সাল পর্যন্ত তার আমলে এর রং ছিলো ধবধবে সাদা। তার উত্তরসূচি অখিলেশ যাদবও মার্জিত রুচির রংটি বহাল রাখেন।
কিন্তু আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পর সবকিছু বদলে যেতে থাকে। প্রথমে শুধু তার চেয়ারটি গেরুয়া রংয়ের ছিলো। এটা ছিলো বোধগম্য। কিন্তু গোটা অফিস ভবন গেরুয়া রংয়ে রাঙ্গানো যে একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্যে অংশ তাও বোধগম্য না হওয়ার কথা নয়। এর মধ্য দিয়েই মেরুকরণের রাজনীতির পথে হাটছেন তিনি।
গেরুয়াকরণের যে মাতামাতি শুরু হয়েছে তা একেবারেই নতুন। তার সরকারি বাসভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি দফতরের চেয়ার পর্যন্ত গেরুয়া বর্ণ ধারণ করছে। তার পরের প্রকল্প হলো সরকারি স্কুলগুলোতে দেয়া ব্যাগের রং পরিবর্তন। এসব ব্যাগে অখিলেশ ও তার পিতা মুলায়েম সিং যাদবের ছবি আঁকা ছিলো। নতুন সরকার এই ছবি রাখবে না, এটা স্বাভাবিক বিবেচনা। কিন্তু ওই ব্যাগের রং গেরুয়া করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন আদিত্যনাথ।
এরপর রাস্তায় গেরুয়া রংয়ের সরকারি বাস চলতে শুরু করেছে। কানপুরে গত সপ্তাহে এক দিনের ক্রিকেট খেলতে নিউজিল্যান্ড দল যখন আসে তখন আদিত্যনাথের পক্ষ থেকে গেরুয়া রংয়ের স্কার্ফ পরিয়ে তাদেরকে স্বাগত জাননো হয়।
রংয়ের যুদ্ধে গত সাত মাসে আদিত্যনাথ তার পূর্বসূরি সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। তার এই গেরুয়াকরণ কতদূর যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন