রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতির বাজেট আসছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী অর্থবছরের জন্য প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকার রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি বাজেট প্রণয়নের কাজটি প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জিডিপির অংশ হিসেবে বাজেট ঘাটতি সাড়ে ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
অন্ততপক্ষে গত ১০ বছরের মধ্যে এত বিশাল পরিমাণ ঘাটতি নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি বলে জানা গেছে। এর আগে সব সময় বাজেট ঘাটতি ‘পেস্টিজ নাম্বার’ হিসেবে বিবেচিত জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এত বিশাল অঙ্কের ঘাটতি কিভাবে পূরণ করা হবে- তারও একটি হিসাব কষে রেখেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রণয়নকারী আমলারা। খুব সহজ উপায় হিসেবে বাজেট ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হবে ব্যাংকিং খাতের ওপর হাত রেখেই। এর ফলে শুধুমাত্র ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ৭২ হাজার কোটি টাকা। যা ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংক থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
এত বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হলে বেসরকারি খাত ঋণ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। কিন্তু সরকারের হাতে ঘাটতি পূরণের জন্য সহজ উপায় হিসেবে আর কোনো দ্বিতীয় পন্থা এখন আর চোখে দেখা যাচ্ছে না। কারণ লকডাউন পরিস্থিতির ফলে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয় কেমন হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্ষেপণ এখন পর্যন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে অর্জন নেই। বছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকা ছুঁয়ে যেতে পারে বলে ইতোমধ্যে শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন এনবিআরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে যেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্থনীতির এখন বেসামাল অবস্থা। এ অবস্থা কত দিন চলবে তা আমরা এখন পর্যন্ত জানি না। আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল কাজ হবে অর্থনীতিকে টেনে তোলা। এ ক্ষেত্রে বাজেট ঘাটতি সাড়ে ৫ হোক বা ৬ হোক তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথ্যা নেই। তবে ঘাটতি পূরণের জন্য আগামী অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে।
চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ রয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি প্রাক্কলন করেছে। সে হিসেবে আগামী অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ চলতি অর্থবছর থেকে ২৯ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বেশি।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ব্যাংক থেকে বেশিমাত্রায় ঋণ নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। ব্যাংক থেকে সরকার ৭২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। চলতি বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪০ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঋণ নেয়া হয়ে গেছে ৭৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সে হিসেবে আগামী বাজেটে ব্যাংকঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৩১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আর আগামী বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে এ উৎস থেকে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন