মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যয় বাড়ছে সাড়ে ৫শ কোটি টাকা
নিউজ ডেস্ক: গত বছরের জুনে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই-১ম পর্যায়’ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন কাজ সম্পূর্ণ করতে না পারায় দুই বছর মেয়াদের সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রকল্পটি প্রথমবারের মতো সংশোধন করতে মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। একনেক কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৭৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনের প্রস্তাবে ১ হাজার ৩০২ কোটি ৯১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণে বাস্তবায়নকারী সংস্থা উল্লেখ করেছে, শিল্প প্লটের সংখ্যা ২৫০টি থেকে বাড়িয়ে ৫৩৯টি নির্ধারণ করায় ভূমি উন্নয়ন ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজের পরিমাণ বেড়েছে। কতিপয় অঙ্গের ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রকল্পে ফায়ার স্টেশনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, ২টি কারখানা ভবন, ফুটপাত, গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, ৩টি আবাসিক ভবন, ১টি মসজিদ ও ১টি মেডিকেল সেন্টার নির্মাণসহ কয়েকটি নতুন অঙ্গ সংযোজন করার ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, পণ্য উৎপাদন ও রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, নতুন প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, অগ্রজ ও পশ্চাৎসংযোগ শিল্পকারখানা গড়ে তোলা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব ও দারিদ্র হ্রাস তথা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) এডিপিতে ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বৃদ্ধি, শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, পণ্যের উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, শ্রমঘন শিল্পকে অগ্রাধিকার প্রদান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, রফতানিমুখী শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদনে বেসরকারি খাতের প্রসার, পণ্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ এবং শিল্প উৎপাদনে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়কে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। এই অগ্রাধিকারের সঙ্গে প্রকল্পটি সংগতিপূর্ণ।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ১.১৫৬ কোটি ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৩.৬৪ লাখ বর্গমিটার রাস্তা ও ৩৮,৭৮৫ বর্গমিটার ফুটপাত নির্মাণ, ৬১,২৮৩ মিটার ড্রেইন, ৯,৩৬৮ মিটার বারবেড ওয়ার ফেন্সিং ও ৪,৪৬৫ মিটার সীমানা দেয়াল নির্মাণ, ৩,৫১৬ বর্গমিটার অফিসার্স ডরমিটরি ও ২,১১৬ বর্গমিটার স্টাফ ডরমিটরি ভবন নির্মাণ, ৩,১৭৩ বর্গমিটার বি টাইপ, ২,৬৬১ বর্গমিটার সি টাইপ ও ২,১৫৪ বর্গমিটার ডি টাইপ আবাসিক ভবন নির্মাণ (১টি করে), ৬,১৫০ বর্গমিটার ইনভেস্টরস আবাসিক ভবন, ৫,০৫২ বর্গমিটার ইনভেস্টরস ক্লাব ও ৫,৬২১ বর্গমিটার জোন সার্ভিসেস কমপ্লেক্স নির্মাণ, ২,৬০৩ বর্গমিটার সিকিউরিটি ও কাস্টমস ভবন (২টি), ১,০০৬ বর্গমিটার সিকিউরিটি ব্যারাক, ১,০০৬ বর্গমিটার আনসার ব্যারাক নির্মাণ, ৩৭,৫৮২ বর্গমিটার কারখানা ভবন (২টি), ১,০৫৯ বর্গমিটার মসজিদ, ২,৪১২ বর্গমিটার মেডিকেল সেন্টার ও আনুষঙ্গিক স্থাপনাসহ ৯৩৬ বর্গমিটার ফায়ার স্টেশন ভবন নির্মাণ, ১৫৩ মিটার মেইন গেট ও সিকিউরিটি গেট এবং ২০২ মিটার কাস্টমস গেট নির্মাণ, ৩০টি সিকিউরিটি ওয়াচ টাওয়ার, ১টি হেলিপ্যাড ও ২টি কালভার্ট নির্মাণ, ৩৯,৩১০ মিটার ১১ কেভি এইচটি লাইন ও ৪৯টি ১১/০.৪১৫ কেভি সাব-স্টেশন নির্মাণ, ১,৪৪৪টি সোলার স্ট্রিট লাইট ও ৩৭০টি সোলার সিকিউরিটি লাইট স্থাপন, ৫৮,৩২৫ মিটার ট্রিটেড ওয়াটার ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ও ১৩,৩৪৬ মিটার র-ওয়াটার কালেকশন নেটওয়ার্ক স্থাপন, ১৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন, ১৫,৪৯৩ মিটার টেলিফোন নেটওয়ার্ক, ৪৮,৯৩৭ মিটার গ্যাস সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ও ১,০৪৮ কিলোমিটার ইফ্লুয়েন্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন করা।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, দ্রুত শিল্পায়ন, পণ্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ, রফতানি আয় বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন