মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাচ্ছে আবাদি কৃষি জমির মাটি
সাস নিউজঃ কৃষি জমি নষ্ট করে কোন কাজ করার কথা থাকলেও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের চারলেন সড়ক ভরাটের কাজে কৃষি জমির মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। জমির মালিকরা এক শ্রেণীর দালালদের খপ্পরে পড়ে অর্থলোভে পড়ে এখন ১৫-২০ ফুট গর্ত করে জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে কৃষি জমি কমে যাওয়ার কারণে আগামী দিনগুলোতে খাদ্য উৎপাদনেও ঘাটতি দেখা দিবে বলে আশংঙ্কা করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
খইয়াছড়া ইউনিয়নের দুয়ারু গ্রামের আবুল হাসনাত জামিল অভিযোগ করেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের চারলেন সড়ক প্রকল্পের জন্য মাটি ভরাট কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মাটি সরবরাহ করতে জনৈক হারুন নামে একব্যক্তি অনাবাদি জমির মাটি না দিয়ে দুয়ারু-পূর্বপোলমোগরা বিলের শতশত একর আবাদি জমির মাটি এক্সেভেটর দিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। জমির মাটিগুলো এমন ভাবে কেটে নেয়া হচ্ছে তাতে আশপাশের জমির মালিকরাও তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবে।
স্থানীয় নুরুল মোস্তফা নামে আরেক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সরকার কৃষি জমি রক্ষায় নানা পদক্ষেপের কথা বললেও মিরসরাইয়ে অবাধে বিক্রি হচ্ছে আবাদি জমির মাটি। ওই মাটি বহন করতে গিয়ে নষ্ট করা হচ্ছে আরো কয়েক একর কৃষি জমি। মাটি ক্রেতারা প্রভাবশালী হওয়ায় নিরিহ মানুষের পক্ষে কিছু বলাও অসম্ভব। অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ‘শেখ হাসিনা স্মরনী’র চারলেন সড়ক প্রকল্প সড়কের মাটি ভরাট কাজে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে আবাদি কৃষি জমির মাটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বড়তাকিয়া বাজার থেকে আবুতোরাব সড়ক দিয়ে আধা কিলোমিটার হেঁটে সড়কের দক্ষিন পাশে গেলে প্রায় আড়াইশ একরের বিশাল দুয়ারু-পূর্বপোলমোগরা বিল। বিলের পূর্ব দক্ষিণ প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, একটি এক্সেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে কৃষি জমির জমি। মাটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছে ১০ চাক্কার ১০টি ট্রাক। প্রায় ১০-১৫ ফুট খাঁড়া গর্ত করে মাটি কাটার ফলে হুমকির মুখে পড়ছে আশপাশের জমিগুলো। এক্সভেটর চালক জানান, তারা তিনজন চালক রাতদিন শিফট হিসেবে মাটি কেটে যাচ্ছেন। তাদের দুই মাসের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছে।
জানা গেছে, চারলেন প্রকল্পের ভরাট কাজে বালু ব্যবহার করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আঁতাত করে আওয়ামীলী, যুবলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা সিন্ডিকেট করে কৃষি জমির মাটি সরবরাহ করছে।
মিরসরাইয়ের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মদ জানান, সরকার কৃষি জমি রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিলেও জমির মাটি বিক্রিতে আমরা জোরালো কিছু করতে পারি না। এক শ্রেনি মানুষ দরিদ্র কৃষকদের অসচেতনতা আর দারিদ্রতাকে পুঁজি করে টপসয়েল কিনে অন্য জায়গায় বিক্রি করে। এখন আবার কোথাও কোথাও মাটির চাহিদা পুরণের জন্য গভীর করে জমির মাটি বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। এতে সামনের দিনগুলোতে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি আরো জানান, টপসয়েলের ৯ ইঞ্চি থেকে এক ফুট পর্যন্ত খাদ্যকণা থাকে। টপসয়েল কেটে ফেলার কারণে ফসল তার খাদ্য খুঁজে পায় না। সে কারণে ওই সব জমিতে ভালো ফলন হয় না। যে জমি থেকে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে শুধু ওই জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হচ্ছেনা, মাটি ভর্তি ট্রাক যেসব জমির উপর দিয়ে যাচ্ছে সে জমি গুলোরও উর্বরা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা অভিযোগ দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে আমরা আবাদি জমির মাটি কাটা রোধে ব্যবস্থা নিবো।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন