মহানবীকে নিয়ে বিতর্কিত বই প্রকাশ : ব-দ্বীপ প্রকাশনের স্টল বন্ধ
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, সাস নিউজ : ইসলাম ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টলটি বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। একইসাথে তারা ওই প্রকাশনীর বেশ কয়েকটি বই জব্দ করেছে।
সোমবার বিকেলে ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টলে পুলিশ অভিযান চালায়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক থেকে পুলিশ জানতে পারে, ব-দ্বীপ থেকে প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটিতে ইসলাম ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো লেখা আছে। বইটি সম্পাদনা করেছেন শামসুজ্জোহা মানিক। এ সময় স্টলে থাকা ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটির ৬ কপি পুলিশ জব্দ করে।
এছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো লেখা আছে কি না তা অনুসন্ধান করতে একই প্রকাশনী থেকে আরও পাঁচটি বই জব্দ করেছে পুলিশ। বইগুলো হলো- শামসুজ্জোহা মানিক ও শামসুল আলম চঞ্চল রচিত ‘আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা’, এম এ খান অনূদিত ‘জিহাদ : জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও দাসত্বের উত্তরাধিকার’, শামসুজ্জোহা মানিকের ‘ইসলামের ভূমিকা ও সমাজ উন্নয়নের সমস্যা’, একই লেখকের প্রবন্ধ সংকলন ‘ইসলামে নারীর অবস্থা’ এবং ‘নারী ও ধর্ম’। ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টলে প্রদর্শিত এ বইগুলোর সব কপি জব্দ করে পুলিশ।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক থেকে আমরা জানতে পারি, ব-দ্বীপ প্রকাশনীতে এমন বই প্রদর্শিত হচ্ছে যেগুলো ইসলাম ধর্মের অনুভূতি আঘাত করা হয়েছে।
পরে অনুসন্ধানে বিতর্কিত লেখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটিতে মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে আপত্তিকর শব্দ পাওয়া গেছে। এ কারণে বইটি জব্দ করা হয়েছে এবং মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদের সঙ্গে কথা বলে স্টলটি বন্ধ করা হয়েছে।
আর পাঁচটি বই জব্দ প্রসঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এ বইগুলোতেও বিতর্কিত লেখা আছে কি না তা অনুসন্ধান করার জন্যই সেগুলো জব্দ করা হয়েছে। আপত্তিকর কিছু পাওয়া গেলে পরে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বলেছে ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন বই প্রদর্শিত হচ্ছে। স্টলটি নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ কারণে প্রকাশনীটির স্টল বন্ধ করা হয়েছে।’
যাচাই করা হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ বলেছে তারা প্রমাণ পেয়েছে। বইগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে সেগুলোতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো লেখা আছে কি না।’
বইগুলোর একটি হলো “ইসলাম বিতর্ক”। বইটির লেখক শামসুজ্জোহা মানিক। বইটির ২৯-৩১ পৃষ্ঠায় আছে- “নবী একদিন তার পালকপুত্র যায়িদের বাড়িতে গেলেন। যায়িদ তখন বাইরে ছিলেন। তিনি যখন যায়িদকে নাম ধরে ডাকলেন তখন তার নব বিবাহিত স্ত্রী যয়নব ভিতর থেকে জানালেন যে যায়িদ বাড়ীতে নাই। কিন্তু মুহাম্মদ তার কৌতূহল দমন করতে পারলেন না। সঙ্গে সঙ্গে ফিরে না গিয়ে তিনি যায়িদের বাড়ীর ভিতরে উঁকি দিলেন। সেখানে তিনি তার পুত্রবধূ যয়নবকে দেখলেন। আরবের গ্রীষ্মকালীন গরমের দিনে যয়নব তখন ফিনফিনে পোশাক পরা অবস্থায় ছিলেন। মুহাম্মদ সুন্দরী যয়নবের আকর্ষণীয় প্রায় নগ্ন শরীর দেখে মোহিত হয়েপড়লেন। ………সুন্দর মনের কোন শ্বশুর হলে পুত্রবধূর ঘরের ভিতর উঁকি দেওয়ার মত ভুল করার জন্য লজ্জা পেয়ে ফিরে যেতেন। তার পরিবর্তে মুহাম্মদ সম্ভবত সুন্দরী যয়নবের যৌনাবেদনময়ী শরীর দেখে নিজের শরীরের ভিতর যৌনতার মহাপ্লাবন অনুভব করেছিলেন। ………… সে সময় নবীর অভ্যাস ছিল মদীনার বিভিন্ন ঘরের ভিতর মহিলারা কী অবস্থায় আছে তা উঁকি দিয়ে দেখা।
……..এছাড়া আমরা নবীর চরম যৌন বিকৃতি সম্পর্কে জানি। তার অনিয়ন্ত্রিত বহুগামিতা, ছোট বালিকা আয়িশাকে পাওয়ার জন্য তার লালসা এবং ৯ বছর বয়সে যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশের উপযুক্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত আয়িশার পিছনে লেগে থাকা এবং তার সঙ্গে উরু মৈথুন করা, যুদ্ধে বন্দী ক’রে ‘কাফের’ মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরীকে সে রাতেই নিজের বিছানায় নিয়ে যাওয়া, বাবা খবর পাঠিয়েছে এই মিথ্যা কথা বলে নিজের স্ত্রী আসমাকে তার বাবা ওমরের বাড়ীতে পাঠিয়ে তারই বিছানায় তরুণী দাসী মারিয়াকে নিয়ে রাত্রি যাপন ইত্যাদি সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। (ইসলাম বির্তক, অধ্যায়: মুসলিম মানসে যৌন বিকৃতি)
ব-দ্বীপ প্রকাশনের আরেকটি বই হলো “ইসলামের ভূমিকা ও সমাজ উন্নয়নে সমস্যা”। এ বইটির লেখকও শামসুজ্জোহা মানিক।
বইটির ৩২ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- “আল্লাহ্ তো মানুষেরই সৃষ্টি। কাজেই এটা মুহাম্মদের মানস সৃষ্টি মুহাম্মদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল এই রকম এক সন্ত্রাসী ও স্বেচ্ছাচারী মহাশক্তিমান অলৌকিক সত্তার কল্পনা এবং তার সর্বশ্রেষ্ঠ দাস প্রতিনিধি স্বরূপ তাঁর নিজেকে।” (অধ্যায় :ইসলাম ও নিরঙ্কুশ একত্ববাদ, পৃষ্ঠা: ৩২)
বইটির ৩৬ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- “আল্লাহ্র প্রকৃতিই যদি এমন এক স্বেচ্ছাচারী ও বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন পীড়নবাদী বা ধর্ষকামীর হয় তবে এই আল্লাহ্র প্রকৃতি অনুসরণে মানুষ কোন্ চরিত্র অর্জন করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।” (অধ্যায়: স্বৈরতন্ত ইসলামের এক অনিবার্যতা, পৃষ্ঠা: ৩৭)
বইটির ৫১ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- “আমাদের দেশে সমাজ জীবনে নারীর তুলনামূলক অনুপস্থিতি এবং নারীর উপর ধর্ষবাদী পুরুষদের যৌন আগ্রাসন ও ধর্ষণের আধিক্য যে কোনও মানুষের চোখে পড়বে। এটা অবশ্য আমাদের দেশের একক অবস্থা নয়, সমগ্র মুসলিম পৃথিবীর অবস্থাই কম-বেশি এই রকম। (অধ্যায়- ইসলামের বিজয়ে নারীর পরাজয়, পৃষ্ঠা- ৫১)
বইটির ১১০ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- “মুহাম্মদ নিজ মতবাদ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কোনও কাজেই পিছপা ছিলেন না এবং তৎকালীন অর্ধসভ্য, দরিদ্র ও মরুময় আরবের মানদণ্ড অনুযায়ী নিজ স্থূল সম্ভোগের ক্ষেত্রেও কম যান নাই। আসলে তিনি ছিলেন অসাধারণ কূট, ধূর্ত ও নির্দয়।” (অধ্যায়: ইসলামের অশুভ ভূমিকা, পৃষ্ঠা-১১০)
বইটির ১১৪ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- “বিশেষত ইসলাম ধর্ম এক ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও ধর্ষকামী বা স্যাডিস্টিক একনায়কী ধর্ম। এই ধর্ষকামী বা স্যাডিস্টিক ধর্মের প্রচণ্ড প্রভাবের ফলে এ দেশে কোনও শুভ শক্তি মাথা তুলে দাড়াতে পারছে না।” (অধ্যায়: ইসলামের অশুভ ভূমিকা, পৃষ্ঠা-১১৪)
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন