মহাখালীর বস্তিতে আবার আগুন, দিশেহারা সব হারানো বস্তিবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক: মহাখালীর সাততলার বটতলা মসজিদ রোডের বস্তিতে গত সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে আগুন লাগে; ফায়ার সার্ভিস এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভালেও তার আগেই পুড়ে যায় আড়াই শতাধিক ঘর। আর তাতে সর্বস্ব হারান ঘরগুলোর বাসিন্দা নিম্ন আয়ের মানুষরা। ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের পর এ বছর নভেম্বরে আবার আগুনে পুড়ল সাততলা বস্তি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য বলছে, প্রতিবার বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এজন্য অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগকেই দুষছেন তারা।
বস্তিবাসী বলছেন, নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে তারা ক্রমেই বঞ্চিত হয়ে এলেও জনপ্রতিনিধিরা এর সমাধান দিচ্ছেন না। নগরে বস্তিবাসীর উন্নয়নে যাদের কাজ করার কথা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা দিলেন দায়সারা উত্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেহাত জমিতে বস্তি
মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে ৫০ একর জমি বেহাত হয়েছিল, তার বড় অংশ জুড়ে এই সাততলা বস্তি। ২০১৪ সালে এই সাততলা বস্তি উচ্ছেদ করে সেখানে ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করতে চেয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে জায়গা পুনরুদ্ধারের তোড়জোড় শুরু করলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালীন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেছিলেন, বস্তিবাসীর পুনর্বাসনের আগে বস্তি উচ্ছেদ করা যাবে না।
পরে উচ্চ আদালতে মামলা হলে বছরের পর বছর ধরে বস্তি উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। একাধিকবার সাততলা বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছু হটেছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রথম ২০০৩ সালে সাততলা বস্তি উচ্ছেদের নোটিস জারি করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ওই নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বস্তিবাসীর পক্ষে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন একজন। তার শুনানি শেষে বস্তি উচ্ছেদ-সংক্রান্ত নোটিসের কার্যকারিতা স্থগিত করেন হাই কোর্ট। এরপর ২০১০ সালে আরেক দফা বস্তি উচ্ছেদের চেষ্টা চালালেও আদালতের আদেশে তাও স্থগিত হয়ে যায়।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নাসিম ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর সাততলা বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ৮ একর জমি দখল করে সাততলা বস্তি গড়ে উঠেছে। এই সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের দুই পাশ ঘিরে সাততলা বস্তির অবস্থান।
সেই জমি উদ্ধারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আপাতত কোনো কার্যক্রম না থাকলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের ‘মাস্টারপ্ল্যান’ এখনও রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) নাসিমা সুলতানা।
তিনি বলেন, “একটা মাস্টারপ্ল্যান চলছে- মহাখালীতে একটা হেলথ ভিলেজ করার .. এটা পরিকল্পনার মধ্যে আছে। কিন্তু কোনো কাজ করা হয়নি। “পরিকল্পনাটা হল, একটা প্ল্যান করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সব ডিপার্টমেন্টকে একটা জায়গায় নিয়ে আসা। এখনকার মতো ছড়ানো ছিটানো না। তবে জমি উদ্ধারের কাজ সত্যি আগায় নাই আমার জানা মতে।”
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন