ঢাকায় এসে দিশেহারা গার্মেন্টস কর্মীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: কারখানা বন্ধ হওয়ায় টিকে থাকার লড়াইয়ে গ্রামে ছুটে গিয়েছিলো গার্মেন্টস দকর্মীরা। শহরে থাকলেই খরচ বাড়বে সে কারণেই গ্রামে ছুটে যান তারা। এরইমধ্যে খবর আসে ৫ এপ্রিল কারখানা খুলবে এবং বেতন দেওয়া হবে। আবার হুড়মুড় করে ফেরার পালা। গণপরিবহন বন্ধ, রাস্তায় নেই গাড়ি, ট্রাকে গাদাগাদি করে, হেঁটে, কোনও কোনও এলাকায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকায় ঢোকেন তারা। কিন্তু ঢাকায় পৌঁছে জানতে পারেন ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ এভাবে ঢাকায় ফেরত এসে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তারা। ইতোমধ্যেই ঢাকা থেকে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় শূন্য হাতে টিকে থাকা তাদের জন্য মুশকিল হবে। এরইমধ্যে বাসা ভাড়ার জন্য তাদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। আর শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, শ্রমিকদের সময়মতো বেতন না দিয়ে গ্রাম থেকে শহরে টেনে আনার দায় মালিকদেরকে নিতে হবে। বেতন না হওয়া পর্যন্ত তাদের তিনবেলা আহারের দায়িত্ব তাদের নিতে হবে।
এরই মধ্যে হঠাৎ লে-অফের নোটিশ দেয় উত্তরার ভার্সেটাইল কারখানা। একাধিক কর্মী প্রতিবাদ করায় মালিকের লোকদের হুমকি-ধামকির শিকার হন। পাশের কারখানা চৈতির এক কর্মী বলেন, এই এলাকার তিনটা কারখানা লেঅফ হয়েছে। আমাদের বেশিরভাগ শ্রমিকই এলাকা ছেড়ে যায়নি। কিন্তু বেতন নেই, খাবে কী তার ঠিক নেই। গত রোববার সকালে কারখানায় গিয়ে ছুটির নোটিশ দেখে ফিরে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যদি কাল বিকালেও জানানো হতো তাহলে হয়রানির শিকার হতাম না। তিনি আরও বলেন, যখন সারাদেশ দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন লে অফের প্রতিবাদ করে শ্রমিক মারধরের শিকার হয়। ঘরে খাবার নাই, পকেটে টাকা নাই, সাহায্য চাইতে এখানে-সেখানে ঘুরছে শ্রমিকরা। দেখার কেউ নাই।
মিরপুরের একটি গার্মেন্টে কাজ করেন শাহজাদ। ছুটি শেষ শুনে রংপুর থেকে এসেছেন। ৫ তারিখ সকালে কারখানার সামনে গিয়ে দেখেন ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ১২ তারিখ কারখানায় যেতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বাড়ির উদ্দেশে যাই যখন তখনই হাত খালি। কিছু টাকা ঋণ নিয়ে এসেছি। এখন শুনি কারখানা বন্ধ, বেতন কবে হবে সেই খবরও কেউ বলতে পারে না। এখন কী করব ভেবে কুল পাই না। গ্রামে থাকতে শুনলাম বাড়ি ভাড়া মওকুফ করা হবে, অথচ কাল রাতেই বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য তাগাদা দিল। এ কয়দিন খাব কী?
মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় একটি কারখানার ৫ জন থাকেন এক বাসাতে। তাদের একজন রকিব মিয়া। তিনি বলেন, শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরেছি। যখন শুনেছি কারখানা খুলছে তখন ভাবছি আসব না। পরে দেখলাম, চাকরিটা যদি চলে যায়। এখন এসে দেখি বিপদ। বিকালে এক ঘণ্টা কারওয়ানবাজারে বসে থেকেছি, যদি কোনও ট্রাকে ফিরতে পারি। কেউ নেয়নি। ঢাকা থেকে বের হওয়া নাকি নিষেধ। একরকম বন্দিই হয়ে গেলাম। আমার সঙ্গে আরও যে চারজন থাকে তাদের মধ্যে দুইজন হেঁটে রওনা দিয়েছে কুমিল্লার পথে। কোনমতে ঢাকা ছাড়তে পারলে একটা না একটা ব্যবস্থা হবে। কিন্তু ঢাকায় থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। আর বাড়িভাড়ার চাপ তো আছেই। আমাদের কেবল যাওয়া আর আসাই হলো। এই ভোগান্তির জন্য কার কাছে অভিযোগ করব।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, গার্মেন্টস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে লাখ লাখ শ্রমিক হয়রানির শিকার। ওদের ঘরভাড়া দিতে না পারলে থাকার জায়গা নেই। তিনি বলেন, এমন অমানবিক অবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়ার দায় কোনওভাবেই মালিক এড়াতে পারে না। ২৫ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার ফলে একবার শূন্য হাতে মাসের শেষে বাড়ি গিয়েছেন তারা। এরপর আবার অর্থ জোগাড় করে কোনওমতে কাজে ফিরেছেন বেতনটা পাবার আশায়। যে শ্রমিক ঢাকায় এসেছেন তারা কি ফিরে যাবেন না থাকবেন এই অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। আর যেতে চাইলেই তো এখন আর সেটা পারছেন না।
ঢাকা থেকে বের হতেও তাদের পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হবে। সেক্ষেত্রে মালিককেই তার কারখানার শ্রমিকের বাঁচার দায়িত্ব নিতে হবে। যে কয়দিন বেতন দিতে পারছেন না তাদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করেন। এই লোকগুলো আত্মসম্মান নিয়ে কাজ করে খেয়েছে, হাত পাততে শেখেনি।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মান্নান বলেন, তাদের বেতন আমরা সঠিক সময়েই দিতে পারবো,ফলে চিন্তার কিছু নেই। সঠিক সময় বলতে কী বুঝাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত প্রথম সপ্তাহে বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়ে থাকে, সেটাই হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন