টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় প্রধানমন্ত্রী
সাস নিউজ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘টাইম’ ২০১৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার টাইমের প্রকাশিত এই ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে, উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনও এ তালিকায় রয়েছেন। এদিকে লন্ডনে ২৫তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাকিংহ্যাম প্যালেসে শুরু হওয়া দুদিনব্যাপী এ শীর্ষ সম্মেলনে কমনওয়েলথের ৫৩টি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে উপস্থিত রয়েছেন টাইম ম্যাগাজিনে প্রভাবশালীদের তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বৈঠকের উদ্বোধন করেছেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
পরে কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ও কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসির ল্যাংকেস্টার হাউসে দেয়া আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
এ ছাড়া তাদের বিকালে সেন্ট জেমস প্রাসাদে কমনওয়েলথ মহাসচিব আয়োজিত অপর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে ল্যাংকেস্টার হাউসে কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দ তিনটি কার্যনির্বাহী সেশনে অংশ নেবেন।
এবার সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- সাধারণ ভবিষ্যতের দিকে (টুয়ার্ডস কমন ফিউটার)। এতে বিশেষ মনোযোগ থাকবে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জন্য উন্নতি, নিরাপত্তা, ন্যায্যতা ও স্থায়িত্ব অর্জনে।
নিয়মানুসারে সিএইচওজিএম বৈঠকের আয়োজক দেশই এর সভাপতিত্ব করে। সিএইচওজিএম বৈঠকে আয়োজক দেশের কাছে কমনওয়েলথের সভাপতিত্ব স্থানান্তর করা হবে। মাল্টার প্রধানমন্ত্রী ড. জোসেপ মাসকাটের কাছ থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের কাছে এ সভাপতিত্ব স্থানান্তর হবে এবং ২০২০ সালে ২৬তম সিএইচওজিএম বৈঠক পর্যন্ত তিনি এ পদে থাকবেন।
২৫তম সিএইচওজিএম বৈঠকটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াটুতে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দ্বীপরাষ্ট্রটি ঘূর্ণিঝড় পাম আক্রান্ত হওয়ায় এটি পরে ব্রিটেনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রথম সিএইচওজিএম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালে এবং এ পর্যন্ত এর ২৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ বৈঠকটি হয় মাল্টার ভ্যালেটাতে। সাধারণত প্রতি দুই বছর অন্তর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে আন্তঃকমনওয়েলথ ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনার উন্নয়নের জন্য ৭ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বাণিজ্য প্রশাসন আরো উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করে তুলতে কমনওয়েলথ দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
‘কমনওয়েলথ’স রোল ইন প্রমোটিং ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক এক বৈঠকে বুধবার তিনি ওই প্রস্তাব উত্থাপন করে এ আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অবশ্যই বাণিজ্য প্রশাসন উন্মুক্ত, আইন ভিত্তিক, স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করবো। তিনি বলেন, আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনার লক্ষ্যে দেশগুলোকে অবশ্যই অভিন্ন সুযোগ-সুবিধা জোরদার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ লক্ষ্যে ৭ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
এগুলো হলো :
১. সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শিল্প সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতার খাত ভিত্তিক সমীক্ষা প্রয়োজন।
২. ছড়িয়ে থাকা বিনিয়োগ সম্ভাবনাসহ অভিন্ন বিনিয়োগ নীতি, নির্দেশনা ও কৌশল গ্রহণ।
৩. বাণিজ্য সহায়ক সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন এবং পিটিএ ও এফটিএ’র অশুল্ক বাধা কমিয়ে আনা।
৪. সেবা বাণিজ্যের জন্য উদারশাসন এবং স্বতন্ত্র পেশার সেবা সুবিধার জন্য খোলাবাজার চালু।
৫. প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ যাতায়াত এবং সরকারি ও বেসরকারি ক্যাটাগরিতে নির্দিষ্ট লোকদের জন্য ভিসা সহজীকরণ।
৬. অবকাঠামো এবং যোগাযোগ প্রকল্প গ্রহণ।
৭. এসএমই এবং ব্লু ইকোনমি খাতসহ উৎকৃষ্ট কেন্দ্র এবং প্রতিষ্ঠানের সহায়তা এবং উন্নয়ন, আরএন্ডডি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল গঠন।
কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোর জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে, তাদেরকে বৃহত্তম সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনা শক্তির পরিচালনায় কমনওয়েলথকে অবশ্যই এই বিপুল মেধাবীদের কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, এ জন্য আমাদের অবশ্যই প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে টানা পোড়েন, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় হুমকি এবং অর্থবাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় কমনওয়েলথ কিভাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনার উন্নয়নে ইতিবাচক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে সেটি এখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্যের অনুমিত পরিমাণ ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামান্য বেশি।
তিনি বলেন, বিশ্বের জিডিপিতে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের অবদান ১৬ শতাংশ, অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৮টি দেশের এই অবদান ১৯ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কমনওয়েলথ দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি’র হার ৪ দশমিক ১ শতাংশ, এই তুলনায় ইইউ’র জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ। তিনি বলেন, আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কমনওয়েলথ দেশগুলোর জনসংখ্যা ২শ’ কোটির বেশি, যা ইইউ’র ৪ গুণ। এই হিসেব থেকে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসা ও বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা বোঝা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এটি দেখে খুশী যে গতবছর প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ বাণিজ্য মন্ত্রীদের বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। এ সময়ে মন্ত্রীরা অভিন্ন সংস্কৃতিকে ‘কমনওয়েলথ ফ্যাক্টর’ হিসেবে আলোচনা করেন যা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নেই এমন দেশের তুলনায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যকে ২০ শতাংশ সাশ্রয়ী করেছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন