আসছে অবাস্তব রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বাজেট
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারী নানারকম বিধি-নিষেধ ও শর্তের বেড়াজালের কারণে থমকে গেছে ব্যবসা-বাডুজ্য। কিন্তু এরইমধ্যে সরকার আগামী বাজেটে (২০২০-২১) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-কে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। অতিরিক্ত রাজস্বের চাপে হয়রানিতে পড়বেন করদাতারা। আর সরকারকে ব্যয় মেটাতে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত সেই ঋণের বোঝা বহন করতে হবে জনগণকে। এভাবে দিনদিন জাতির ঘাড়ে বেড়ে যাচ্ছে ঋণের মাত্রা। তাই আয়-ব্যয়ের যৌক্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের তাগিদ তাদের।
তারা আরও বলছেন, দেশে প্রায় দুই মাস ধরে চলছে সাধারণ ছুটি। থমকে গেছে ব্যবসা-বাডুজ্য। চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায় গত অর্থবছরের চেয়ে কমবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব বাড়াতে চারটি কৌশল গ্রহণ করেছে সরকর। এগুলো হচ্ছে- আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রণোদনা প্রদান এবং কাস্টমস ও বন্ডেড ওয়্যারহাউজের সব কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনা।
এছাড়া ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের নিমিত্তে দ্রুত এবং ব্যাপক ভিত্তিতে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) যন্ত্র ক্রয়, স্থাপন ও কার্যকর করা। পাশাপাশি আমদানি-রফতানি পণ্য সব পয়েন্টে শতভাগ স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
এদিকে গত বছরের ২৪ জুলাই অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে এক লাখ ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি), ৫০০ ইউনিট সেলস ডাটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) এবং ফিসক্যাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। ২৪ জুলাই কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদনও দেয়া হয়। এসব ইএফডি কিনে গত বছরই এর মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা ছিল অর্থমন্ত্রীর। কিন্তু সেটা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। একইভাবে আমদানি-রফতানি পণ্য সব পয়েন্টে শতভাগ স্ক্যানিংয়ের উদ্যোগও অনেক আগেই গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তাও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
ব্যয়ের বাজেট বড় হওয়ায় এনবিআরের টার্গেটও বড় হয়। ব্যয়ের বাজেট বড় হোক এটা ঠিক আছে। সরকারের ব্যয় মানেই অর্থনীতির আয়। কিন্তু সেজন্য টাকার সংস্থান আছে কি-না, সেটা না দেখে ব্যয়ের বাজেট বাড়ানো ঠিক নয়। এনবিআরকে একটি অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলো কিন্তু তারা সেটি অর্জন করতে পারল না, তখন ব্যয় মেটাতে সরকারকে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে লোন নিতে হবে। অতিরিক্ত টার্গেট নির্ধারণ করে যখন বাজেট দেয়া হয় তখন সরকারের এ ঋণের পরিমাণ-টাও বেড়ে যায়। আইনগতভাবেও এটা একটা অনিয়ম, অযৌক্তিক। কারণ আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করলে অর্থনীতি আরও বেশি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
এছাড়া বাজেট হচ্ছে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া একটি লিখিত দলিল। এতে যা বলা হয় তাই অধিকারে রূপ নেয়। তাই অযৌক্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে অর্থনীতি-কে ঋণগ্রস্ত করে দেয়ার অধিকার দিয়ে দেয়া হয়। মনের মতো একটা লম্বা বাজেট তৈরি করলাম তারপর এনবিআরকে বললাম, এত টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে। এটা বলার মানে হলো এনবিআরের ওপর তা চাপিয়ে দেয়া।
এদিকে অর্থবিভাগ বলছে, আগামী বাজেটে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধবাবদ বরাদ্দ বাড়ছে ৬,৪৪৮ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৫৭ হাজার ৬৭ কোটি টাকা, অবশ্য সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয় ৫৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ৪৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা।
থমকে যাওয়া অর্থনৈতিক কর্মকা-ের মধ্যেই আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রায় পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে এনবিআরকে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের কথা রয়েছে। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, পাঁচ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরে আগামী বাজেট প্রণয়নের কথা ভাবা হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার কথা চিন্তা করা হয়।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন