ভাড়াটে খুনি দিয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতাকে হত্যা করা হয়েছে
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা: ভাড়াটে খুনি দিয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা আজাদকে খুন করানো হয়েছে। মাত্র দশ হাজার টাকার জন্য শ্রাবণ মিয়া এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খাঁন। গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন শ্রাবণ মিয়া কালো হুডি পড়ে একটি (পৌনে দুই ফুট লম্বা) লোহার পাইপ দিয়ে আজাদের মাথায় আঘাত করে। পরে গুরুতর আহত আজাদ সিলেটের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান। গতকাল মঙ্গলবার আফতাব নগর ইউনিয়নের বাহ্মণগাঁও গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে পুলিশ শ্রবণ মিয়াকে গ্রেফতারের করে। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শ্রাবণ মিয়া হত্যার কথা শিকার করে। তার দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে শ্রাবণের বসতঘর থেকে হত্যাকা-ের সময় ব্যবহৃত লোহার পাইপ, হুডি ও জিন্সের প্যান্টসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ।’
পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খাঁন জানান, হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা আজাদ মিয়ার সঙ্গে শ্রাবণের কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা পূর্ব পরিচয় ছিল না। ঘটনার দিন আজাদকে চিনিয়ে দেওয়া হয়। কখন আঘাত করা যাবে তার সুযোগ খুঁজতে থাকে মামলার অন্যতম আসামি ও হত্যার পরিকল্পনাকারী উকিল মিয়ার ছেলে পাবেল ও তার ঘনিষ্ট বন্ধু রিপন। তারা সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আজাদ মিয়াকে অনুসরন করে এবং হত্যার সুযোগ খুঁজে। দিনের বেলায় কোনও সুযোগ না পেয়ে রাতে বাসায় ফেরার সময় আজাদ মিয়াকে লোহার পাইপ দিয়ে মাথায় ও পায়ে আঘাত করা হয়।
এছাড়াও আজাদ হত্যার বিষয়ে বেশ কিছু আলামত তুলে ধরে তিনি বলেন, মামলায় উকিল মিয়ার ছেলে রিপনের সঙ্গে একটি নারী নির্যাতন মামলা ও উপজেলা নির্বাচনে আজাদের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার জের ধরে উকিল মিয়ার ছেলে পাবেল ও তার বন্ধু রিপন, তাদের সহযোগীদের নিয়ে শ্রাবণের সহযোগিতায় এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। তবে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার কারণে এঘটনা ঘটেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ও মোবাইল ট্রেকিংয়ে মাধ্যমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এবং সদর থানার ওসি শহিদুল্লাহ’র নেতৃত্বে শ্রাবণ মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে শ্রাবণ মিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম বলেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে নামগুলো প্রকাশ করা যাবে না।’ গ্রেফতার শ্রাবণ মিয়াকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নিলে আরও তথ্য বের হয়ে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘শুধু খুন নয়, যে কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত আসামিকে পুলিশ অবশ্যই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। আটক শ্রাবণ মিয়ার বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মাদক মামলাসহ দুটি মামলা রয়েছে।’
উল্লেখ্য গত ১৪ মার্চ একটি (পৌনে দুই ফুট লম্বা) লোহার পাইপ দিয়ে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা আজাদ মিয়ার মাথায় আঘাত করা হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ মার্চ তার মৃত্যু হয়। এঘটনায় নিহতের ভাই আজিজ মিয়া বাদী হয়ে সদর থানায় ৬ জনকে আসামি করে ১৮ মার্চ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার অন্যতম আসামি উকিল মিয়াকে ১৭ মার্চ মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের জালালপুর গ্রাম থেকে আটক করে পুলিশ। এনিয়ে মামলার দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজাদ মিয়াকে হত্যার পর থেকে জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন সংগঠন মাববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে এ হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে আসছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন