মৌলভাবাজারে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন হিটব্যাক’
সাস নিউজ ২৪ ডট কম : মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাসিরপুরে ‘জঙ্গি আস্তানা’য় অভিযান শুরু করেছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াটের সদস্যরা।
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশনুজ্জামান সিদ্দিক জানিয়েছেন, “সন্ধ্যার পর থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন হিটব্যাক’।”
এ দিকে জানা গেছে, নাসিরপুরের ওই বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের যানবাহন রাখা হয়েছে। আর বড়হাট এলাকায় বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার কিছুটা আগে সোয়াট সদস্যরা ফতেপুরে আসেন। সন্ধ্যার পর থেকে সেখানে গুলি ও বোমার শব্দ শোনা যায়। তবে রাত সোয়া ৮টার পর সেখান থেকে আর কোনো শব্দ শুনতে পাননি তাঁরা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও কুসুমবাগ এলাকা থেকে উপজেলা পরিষদের সম্মুখ পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের উভয় পাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া নাসিরপুরের জঙ্গি আস্থানার বাড়ির দুই কিলোমিটার জুড়েও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট এলাকায় এবং সদর উপজেলার ফতেপুর এলাকায় দুটি বাড়ি ঘেরাও করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এই বাড়ি দুটির মালিক লন্ডনপ্রবাসী সাইফুর রহমান। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার পরপরই একই বিভাগের জেলা মৌলভীবাজারে অভিযান শুরু হয়েছে। সিলেটের ঘটনায় চার জঙ্গি নিহত হয়। তাদের মধ্যে তিন পুরুষ ও এক নারী রয়েছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। স্প্লিন্টারের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) দুই কর্মকর্তা।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফতেহপুর এলাকার জঙ্গি আস্তানার পাশে ভোর রাতে পুলিশ অবস্থান নেয়। সকাল ৭টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ ওই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে মারা হয়। পুলিশ পিছনে এসে গুলি ছুড়ে। এর পর থেকে ভেতর থেকে কয়েক দফা গুলি ও বোমা ছোড়া হয়েছে।
এদিকে বড়হাট সন্দেহজনক জঙ্গি আস্তানা নির্মাণাধীন তিনতলা ভবন পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে। এই এলাকা দিয়ে কাউকে যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।
উপস্থিত লোকজন জানায়, মৌলভীবাজার-সিলেট সড়ক থেকে বাসাটির অবস্থান দেড়শ গজ ভেতরে। সরু গলি হওয়ায় সেখানে পুলিশ, র্যাব ও বিশেষ বাহিনীর লোকজন ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে মৌলভীবাজার শহরের প্রতিটি প্রবেশ মুখে পুলিশের তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। শহরে প্রবেশমুখী যানবাহনে তাল্লাশি করা হচ্ছে।
পুরো শহরজুড়ে শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নজরদারি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও প্রবেশ দ্বারগুলোতে মোতায়েন করা হয় পুলিশ ও র্যাব। সন্দেহ হলে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। শহরের ঢাকা-সিলেট সড়কের দুইপাশের দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, বাসার লোকজন যেন নিরাপদে বাসার ভিতরে অবস্থান করেন এবং বাসার ছাদে না উঠেন।
সকাল থেকে থেমে থেমে বোমা ও গুলির শব্দ শহরের বড়হাট ও সদর উপজলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুরের জঙ্গি আস্থানায় শুনা গেলেও দুপুর ২টার পর এ ধরনের শব্দ শুনা যায়নি।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন