দেশে চাল উৎপাদন—মজুতে রেকর্ড, দামে নাভিশ্বাস ক্রেতার
নিজস্ব প্রতিবেদক: গত কয়েক মৌসুমে দেশে চালের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। সবশেষ (২০২২—২৩) অর্থবছরে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে চালের উৎপাদন। সরকারের গুদামেও রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুত আছে, আমদানি পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। ডলার সংকটসহ নানা অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে বাংলাদেশ। তবে ক্রেতাদের অতটা স্বস্তি মিলছে না। এত উৎপাদন ও মজুত থাকার পরও বাজারে চালের দাম কমছে না, বরং বাড়ছে। এতে চরম সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশে চাল উৎপাদনের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখারও পূর্বাভাস উঠে এসেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গ্লোবাল ফুড আউটলুক প্রতিবেদনে। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, এক বছরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হারে চালের উৎপাদন বাড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বিদায়ী বছরের (২০২২—২৩) তুলনায় নতুন বছরে (২০২৩—২৪) উৎপাদন বাড়তে পারে এক.৮ শতাংশ। পাশাপাশি মোট চাল উৎপাদনে চীন ও ভারতের পর তৃতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
এক বছরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হারে চালের উৎপাদন বাড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বিদায়ী বছরের তুলনায় নতুন বছরে উৎপাদন বাড়তে পারে ১.৮ শতাংশ। পাশাপাশি মোট চাল উৎপাদনে চীন ও ভারতের পর তৃতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
খাদ্যশস্য মজুত বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক তপন কুমার দাস জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের উৎপাদন, সংগ্রহ ও মজুত রেকর্ড ছুঁয়েছে। ফলে চাল নিয়ে কোনো শঙ্কার কারণ নেই। বরং সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি আমরা। নানা অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে বাংলাদেশ এখন কিছুটা হলেও খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তিতে আছে।
এ বিষয়ে কৃষি গবেষক ও অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর উৎপাদনের যে তথ্য দেয় সেটা অনেক সময় মেলে না। আবার ভোগের যে তথ্য দেওয়া হয় সেটাও সামঞ্জস্যহীন। মানুষের খাদ্য ছাড়াও চালের বহুমুখী ভোগ (ব্যবহার) বাড়ছে। পরিসংখ্যানে সেসব আসছে না। যে কারণে সামান্য সংকটে চাল আমদানির প্রয়োজন হয়।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়গুলো কখনো পরিষ্কার হয় না, যে সুযোগটা নেন ব্যবসায়ীরা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দুর্বলতা থাকে। ফলে রেকর্ড উৎপাদনের সুবিধা পান না ভোক্তারা।
চাল নিয়ে সরকারের দেওয়া তথ্য—উপাত্তের সঙ্গে একমত নন চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী। তিনি বলেন, চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকে বলেই অনেক সময় আমাদের (ব্যবসায়ীদের) চাল আমদানি করতে হচ্ছে। উদ্বৃত্ত থাকলে সেসব চাল যায় কোথায়? চড়ামূল্যের এ বাজারে নিশ্চয় কেউ বছরের পর বছর চাল মজুত রাখে না। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলে ব্যবসায়ীরা কেন আমদানি করেন, এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বাড়তি দামের বিষয়ে লায়েক আলী বলেন, সবকিছুর বাজার এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সে প্রভাব চালের দামেও রয়েছে। অন্য নিত্যপণ্য চড়া দামে কিনে ব্যবসায়ীরা কম দামে চাল বিক্রি করতে চাইবেন না নিশ্চয়ই। চাল যারা বিক্রি করেন তারা যদি দাম না পান, তাহলে তাদের জীবন চলবে কীভাবে? সে হিসেবে অন্য নিত্যপণ্যের তুলনায় চালের দাম স্থিতিশীল বলা যায়।
চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকে বলেই অনেক সময় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানি করতে হচ্ছে। উদ্বৃত্ত থাকলে সেসব চাল যায় কোথায়? চড়ামূল্যের এই বাজারে নিশ্চয় কেউ বছরের পর বছর চাল মজুত রাখে না।
তিনি বলেন, এ বছর ধানের দাম নিয়ন্ত্রণে আছে। আসলে কৃষক থেকে মিল পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা বাজারে। মিলগেটের মূল্য থেকে খুচরা বাজারে চালের দামে বিস্তর ফারাক। আমরা বার বার এ কথা বলছি, অথচ কেউ খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে না।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন